‘১০ ফেব্রুয়ারি’ গৌরবোজ্জ্বল দিন কালা ছায়ায় আচ্ছন্ন!
সত্যদর্শী :
আজ ১০ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের নিকট একটি বিশেষ দিন। দিবসটি এক দিকে সাহসিকতা ও বীরত্বের মহিমায় সমুজ্জ্বল, অন্যদিকে আপোষ ও আত্মসমর্পণের কালিমায় আচ্ছন্ন।

এমন একটি দিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতাল, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, দগ্ধ আহতদের করুণ আহাজারি আর পেট্রোল বোমা আতঙ্ক সাধারণ মানুষকে এতটা আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, এ পরিস্থিতি অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে আড়াল করে ফেলেছে। কিন্তু পার্বত্য বাসীর স্মৃতি থেকে এ দিনটি বিস্মৃত হবার নয়।
১৯৯৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে এক বীরত্বব্যঞ্জক গৌরবোজ্জ্বল দিন। তৎকালীন বিএনপি সরকারের অন্যায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ১৪৪ ধারা লংঘনের মাধ্যমে এদিন প্রতিবাদের এক মাইল ফলক স্থাপন করেছিল। পিসিপি’র প্রতিবাদী অবস্থানের কারণে সে সময় বিএনপি সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের ফলে জনগণের ওপর অন্যায় দমন-পীড়ন অনেকাংশে শিথিল হয়েছিল। দিবসটি পিসিপি তথা লড়াই সংগ্রামে নিয়োজিত কর্মীদের নিকট এক গৌরবোজ্জ্বল দিন, কঠিন সময়ে সাহস সঞ্চার, অনুপ্রেরণা লাভ ও উজ্জীবিত হবার এক উৎস।
দুঃখ ও গ্লানিময় ব্যাপার হলো এই, পিসিপি কর্তৃক ১৪৪ ধারা লংঘনের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনার চার বছরের মাথায় ১৯৯৮ সালে এ দিন সন্তু লারমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট অস্ত্র (একে ৪৭ রাইফেল) তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। শেখ হাসিনা সন্তু লারমার নিকট তখন “সাদা গোলাপ” তুলে দিয়েছিলেন, যা কত আগেই শুকিয়ে প্রেতাত্মা (‘আঙ’) হয়ে পাহাড়ি জনগণের রক্ত হরণ করে চলেছে! অন্যদিকে সন্তু লারমার সমর্পিত একে ৪৭ রাইফেল জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত এবং সরকারের বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে!!! তখন বিটিভি’র প্রাইম নিউজে সে হাস্যোজ্জ্বল দৃশ্য কত বার যে প্রদর্শিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আওয়ামী লীগের বিজয় ক্রোড়পত্রেও উক্ত হাস্যোজ্জ্বল ছবি বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। শাসকচক্র এ কাজে কত সিদ্ধহস্ত!! আর পাহাড়ি জনগণ, বুদ্ধিজীবী ও নেতৃত্ব কত বেকুব!!! অবশ্যই সবাই এক নয়, সেদিনও সবাই বোকা বনে যায় নি। অস্ত্র সমর্পণের আগেই পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ব্যানার উঁড়িয়ে আপোষ আর দালালি প্রত্যাখ্যান করেছিল প্রতিবাদী অংশটি, যা সেদিন দেশী-বিদেশী সাংবাদিক কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিবর্গ সচক্ষে প্রত্যক্ষ করে প্রমাণ পেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ যাদুকরী কায়দায় অস্ত্র হাতিয়ে নিয়ে “শান্তির প্রতীক শ্বেত গোলাপ” তুলে দেয়ার ভঙ্গীতে আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির বীজ (‘আঙ’) আরও গভীরে প্রোথিত করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে ১০ ফেব্রুয়ারির মত এক উজ্জ্বল দিনে আপোষ ও আত্মসমর্পণের কালো ছায়া পড়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি সাহসিকতা ও বীরত্বের মহিমায় যেমন সমুজ্জ্বল, অন্যদিকে তাতে পড়েছে আপোষ ও আত্মসমর্পণের কালো ছায়া। কারা দিবসটির গৌরবোজ্জ্বল দিক উর্ধ্বে তুলে ধরে, আর কারা গ্লানিময় কালো অধ্যায়ের স্থায়িত্ব দিতে চায়, তা দিয়ে তাদের সনাক্ত করা সহজ।
আত্মসমর্পণ জায়েজ করতে যত চাতুর্যপূর্ণ যুক্তির অবতারণা করা হোক না কেন, তা যে রাজনৈতিকভাবে চরম অপরিণামদর্শিতা ও বিচ্যুতি ছিল, তা আজ হাতে-কলমে প্রমাণিত। দীর্ঘ ১৭ বছর প্রায় দেড় যুগ পরেও যারা এ চরম সত্য উপলদ্ধি করতে পারছে না বা না বোঝার ভাণ করে থাকে, তারা আসলে শাসকচক্রের পক্ষ হয়ে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালাতে ‘ট্রয় নগরীর কাঠের ঘোড়া’ হয়ে নিয়োজিত রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্বিধাগ্রস্ত কর্মীবাহিনী ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন জোরদার করা এখন যুগের দাবি। ১০ ফেব্রুয়ারির সাহসিকতা ও বীরত্বের গৌরবোজ্জ্বল দিক পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেই প্রকৃত আন্দোলনকারীরা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। এটা প্রমাণিত যে, দালালি ও আপোষের অন্ধকার কানাগলিতে মুক্তি নেই, লড়াইয়ের কঠিন পথে অধিকার অর্জিত হবে।#
১০.০২.২০১৫
—————————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।