১০ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন দিবস (ছবিসহ)

0
২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর, দীঘিনালায় ইউপিডিএফ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্থানীয় যুবক-যুবতীরা শারীরিক কসরতের মাধ্যমে Full autonomy প্রদর্শন করছে। ভবিষ্যতে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আত্মোৎসর্গ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।।

সিএইচটি নিউজ ডেস্ক ।। পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে ১০ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৯৭ সালের এদিন তিন গণতান্ত্রিক সংগঠনের (পাহাড়ি গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ) এর উদ্যোগে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন’ দাবি উত্থাপন করা হয়।

তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে এদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংবিধানিক গ্যারান্টিসহ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রদান, বহিরাগত বাঙালিদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি সম্বলিত একটি লিফলেটও প্রচার করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনের ইতিহাসে এদিন প্রথম বারের মত সুস্পষ্টভাবে এ অঞ্চলে বসবাসকারী ১৩টি জাতিসত্তা ছাড়াও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সাঁওতাল-গুর্খা (নেপালি)-অহমি এবং পুরাতনবস্তী বাঙালিদেরও মর্যাদার সাথে স্বীকৃতি, অধিকার প্রদানের দাবিসহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য উত্থাপিত হয়েছিল, যা এ যাবৎকালে প্রচারিত “দশ ভাষা-ভাষী ১৩ জাতি” দাবির উন্নত ও উচ্চতর রূপ।  

পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নেয়ার দাবিতে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস চত্ত্বর অতিক্রমের সময় তোলা ছবি, ১০ মার্চ ’৯৭। ইত্তেফাকের সৌজন্যে।

চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে এ সময় সরকারের সাথে জনসংহতি সমিতির বৈঠকের ভেন্যু খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজ থেকে ঢাকাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় স্থানান্তর করে তৃতীয় বৈঠক নির্ধারিত হয় ১২ মার্চ ১৯৯৭। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মূল দাবিকে উপেক্ষা করে সরকারেরর সাথে চুক্তিতে উপনীত হতে জনসংহতি সমিতি যখন প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সব কিছু পাকাপাকি করে ফেলতে উদ্যত, জাতীয় জীবনের এমনই এক সন্ধিক্ষণে রাজপথে নেতৃত্বদানকারী তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের এই দাবি উত্থাপন করে। সত্তর-আশি দশকের দাবি-দাওয়া ও বক্তব্য নিয়ে এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজেই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবিই যুগের দাবি হয়ে দাঁড়ায়। এর মাধমে পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিধাগ্রস্ত জনতা ও আন্দোলনকামী কর্মীবাহিনী খুঁজে পায় ভবিষ্যৎ পথ চলার সঠিক দিশা।

Full autonomy প্রদর্শনের রিহার্সাল-এর দৃশ্য (উপর ও নীচ), ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬, দীঘিনালা। সেনা টহল হুমকি উপেক্ষা করে মাঠে কসরতে অংশ নিচ্ছে নির্ভীক তরুণ-তরুণীরা। উল্লেখ্য, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাদের ডিসপ্লে করতে হয়েছে।

স্মর্তব্য যে, তিন গণতান্ত্রিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ইন্সটিটিউটের সম্মুখের লনে ৮ মার্চ এক জরুরি বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন করা হয়।

এই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবিকে মূল ভিত্তি করে পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

তিন সংগঠন PGP-PCP-HWF -এর অকুতোভয় কর্মীবাহিনীকে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সকল রাষ্ট্রীয় সংস্থার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী, গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ণ নজরদারি ও উদ্যত রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন-এর ব্যানার উঁচিয়ে ধরতে দেখা যাচ্ছে।
স্মর্তব্য যে, স্টেডিয়ামে দেশি-বিদেশী সাংবাদিক, কূটনৈতিক, পর্যবেক্ষক ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সে সময় ৩০ হাজারের অধিক দর্শকের সম্মুখে ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন’-এর ব্যানার প্রদর্শিত হয়।
খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮। (ছবি ফিলিপ গাইন-এর সৌজন্যে)

সরকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন দমনের জন্য ইউপিডিএফের ওপর অবর্ণনীয় নিপীড়ন জারি রেখেছে। অন্যায় ধরপাকড়, বিনা বিচারে হত্যাসহ মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রাখা হচ্ছে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না ইউপিডিএফকে।

তবে, নানা প্রতিবন্ধকতা ও শত দমন-পীড়নের মধ্যেও ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

পাহাড়ি গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ  ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন করে প্রচারিত লিফলেট, ১০ মার্চ ১৯৯৭, ঢাকা।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More