১৫ দিনেও খোঁজ মেলেনি রাঙামাটিতে ‘অপহৃত’ কলেজ ছাত্র আলোড়ন চাকমার

0

গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পরিবারের লোকজন

আলোড়ন চাকমা। সংগৃহিত ছবি


কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

রাঙামাটি সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আলোড়ন চাকমা নিখোঁজ/ ‘অপহরণে’র শিকার হয়েছিলেন গত ৩ অক্টোবর ২০২৫ বিকালে। সেদিন ভাড়া বাসা থেকে বাজার করতে বের হয়ে রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হন বলে তার রুমমেট জানিয়েছিলেন এবং সেখানকার এক প্রত্যক্ষদর্শী কল্যাণপুরের একটি দোকান থেকে কয়েকজন লোক আলোড়নকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন বলেও জানিয়েছিলেন।

কিন্তু নিখোঁজ/অপহৃত হওয়ার ১৫ দিনেও আলোড়ন চাকমার কোন খোঁজ মেলেনি। ফলে তার জীবন নিয়ে পরিবারের লোকজন গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। 

আলোড়ন চাকমার বাড়ি কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের হাজাছড়ি গ্রামে। তার পিতার নাম প্রিয়ধন চাকমা ও মাতার নাম কল্পনা চাকমা। তিনি স্থানীয় আগমুলিম ক্লাব শিল্পী গোষ্ঠির একজন সদস্য। এলাকায় নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সেখানে ভর্তি হতে না পেরে রাঙামাটি সরকারি কলেজে গণিত বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি রাঙামাটি শহরের টিটিসি রোডের পিটিআই এলাকায় একজনের সাথে রুমমেট হিসেবে ভাড়া বাসায় থেকে কোন রকমে পড়াশোনা করছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, জেএসএস (সন্তু)-এর ছাত্র-যুব-নারী সংগঠনের কতিপয় সদস্য আলোড়কে অপহরণ করে গুম করে রেখেছেন, যদিও তাদের কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

তবে, তাদের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, আলোড়নের সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধবরা যখন তার সন্ধানের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলেন তখন জেএসএস (সন্তু) এর ছাত্র ও নারী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছিলেন। এ থেকে ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে।

আলোড়ন চাকমা নিখোঁজের পর কোথাও খুঁজে না পেয়ে ৫ অক্টোবর তার বাবা প্রিয়ধন চাকমা রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। কিন্তু পরদিন থানায় ডেকে পাঠিয়ে ওসি তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। এ অভিযোগ প্রিয়ধন চাকমা নিজেই করেছেন। শুধু তাই নয়, আলোড়ন চাকমা যেদিন নিখোঁজ হন সেদিন তার রুমমেটের ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টও থানার ওসি মুছে ফেলতে বাধ্য করেন এবং তার বদলে ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে তুলে ধরে আরেকটি পোস্ট দিতে তাকে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত ৯ অক্টোবর কাউখালী সদরে আলোড়নের মুক্তির দাবিতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও হাজাছড়ি গ্রামবাসীরা মানববন্ধন করেন 

আলোড়ন চাকমার মুক্তি ও তাকে উদ্ধারের দাবিতে গত ৯ অক্টোবর রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সদরে ‘পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও হাজাছড়ি গ্রামবাসী’ এবং ‘আগমুলিম ক্লাব শিল্পী গোষ্ঠী” যৌথভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে আলোড়নের  বাবা-মা ছেলেকে মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানে কথা বলতে গিয়ে আলোড়ন চাকমার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তার ছেলেকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানান। আলোড়নের বাবা ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করেন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। 

ছেলে আলোড়নের মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে তার বাবা-মা। ছবি: গত ৯ অক্টোবর কাউখালীতে মানববন্ধন থেকে তোলা।  


কিন্তু এরপরও তাকে উদ্ধারে রাঙামাটি পুলিশ ও প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। পুলিশের এই নীরব ভূমিকা জনমনে নানা সন্দেহ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে, ১৫ দিনেও আলোড়ন চাকমার কোন খোঁজ না মেলায় তার পরিবারের লোকজন, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব ও এলাকার জনগণ তার জীবন নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তারা আলোড়ন চাকমার সন্ধান পেতে চান। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ আলোড়ন চাকমাকে উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে তার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলেই তাদের বিশ্বাস।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More