পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দিন

১৫ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামে ‌‘অশুভ শক্তি প্রতিরোধ’ দিবস

0


সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

১৫ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিরোধের দিন। ১৯৯৫ সালের এই দিন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর বান্দরবান জেলা শাখার সম্মেলন বানচালের উদ্দেশ্যে প্রশাসন ও সরকারের দালালরা ষড়যন্ত্র করে ১৪৪ ধারা জারি করলে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রশাসনের এই অন্যায় ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল বের করে। 

পরে পুলিশ ও বহিরাগত বাঙালিরা মিছিলের উপর হামলা চালালের পিসিপি’র নেতা-কর্মী সমর্থকরা এতে প্রতিরোধ করে। সেটলার বাঙালিরা দু’টি পাহাড়ি গ্রামে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। পাহাড়িদের বেশ কিছু বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। এতে প্রতিরোধ করতে গিয়ে পিসিপি’র ৭ নেতাকর্মীসহ বহু আহত হন।

এই দিনটিকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ‘অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।

পিসিপি’র বান্দরবান জেলা শাখার সম্মেলনকে বানচাল করতে ১৯৯৫ সালের ১৩ মার্চ সাচিং প্রু জেরীর বাসভবনে মিটিং করে কতিপয় দাগি মাস্তান ও বিএনপি’র নেতাকর্মী “বান্দরবানের শান্তিপ্রিয় জনগণ” নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের জন্ম দেয়। পিসিপির উক্ত সম্মেলন বানচাল করতে প্রশাসনকে দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৫ মার্চ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও দালালদের লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডারা মিছিল করে পাহাড়ি বিদ্বেষী ও উস্কানিমূলক শ্লোগান দেয়। ফলে পিসিপিও ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল বের করতে বাধ্য হয় এবং পিসিপি’র সম্মেলন কারোর বিরুদ্ধে নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে পিসিপি’র নেতা-কর্মী, সমর্থকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলো। এতে পুলিশের সাথে পিসিপি-নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বহিরাগত বাঙালি দুর্বৃত্তরা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় রিক্তন চাকমাসহ পিসিপি’র ৭ জন নেতাকর্মী মারাত্মক আহত সহ আরও অনেকে আহত হন।

হামলাকারীরা পিসিপি’র নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। এদিন তারা শহরের মারমা অধ্যুষিত গ্রাম উজানী পাড়া ও মধ্যম পাড়ায় হামলা চালায়। তারা লুটপাট ও বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ উল্টো পিসিপি’র ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ও ২২ জনকে গ্রেফতার করে।

দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ এই হামলার প্রতিবাদ জানায়। সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৭ মার্চ ঢাকা থেকে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা জেলা প্রশাসক, জেল কর্তৃপক্ষ, ধর্মীয় পুরোহিত, পুলিশ অফিসার, ঘটনার শিকার ব্যক্তিসহ অন্যান্য আরো বহু লোকের সাথে কথা বলেন। তদন্ত টিমটি ১৮ মার্চ ঢাকায় ফিরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তারা ১৫ মার্চের ঘটনার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও ছাত্র শিবিরকে দায়ি করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More