২০২৪ সালে পাহাড়ে আলোচিত ঘটনা: ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৭ ভোটকেন্দ্রে শূন্য ভোট

0

২০২৪ সালে পাহাড়ে আলোচিত ঘটনা: ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৭ ভোটকেন্দ্রে শূন্য ভোট


নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আয়োজিত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (ডামি নির্বাচন হিসেবে খ্যাত) পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৭টি ভোট কেন্দ্রে শূন্যভোট পাড়ার ঘটনাটি দেশে আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়। দেশের ইতিহাসে ইতিপূর্বে এতগুলো কেন্দ্রে শূন্যভোট পড়ার কোন নজির নেই। ফলে এ ঘটনাটি পত্র-পত্রিকায় বিশেষ স্থান লাভ করে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ রাতের আঁধারে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে তাদের সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফের চার ছাত্র-যুব নেতা বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। গঠন করা হয় পাহাড়ের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি।

নিহতদের স্মরণে পানছড়িতে ইউপিডিএফের আয়োজিত স্মরণসভা থেকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়। পালিত হয় নানা কর্মসূচি।

পরবর্তীতে ইউপিডিএফের ২৫তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের ডাক দেওয়া হলে তা জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে পরে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিত করতে। কিন্তু চার তরুণ নেতা খুনের ঘটনা জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলার ফলে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল প্রায়ই ফাঁকা। অনেক কেন্দ্রে কোন ভোটারই উপস্থিত হননি। ভোট শেষে ভোটের ফলাফলে দেখা যায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ২৭টি ভোট কেন্দ্র (খাগড়াছড়ি জেলায় ১৯ ও রাঙামাটি জেলায় ৮) ছিল একেবারেই ভোট শূন্য, যা হাসিনার প্রশাসনসহ সবাইকে অবাক করে দেয়। শুধু তাই নয়, আরো অনেক ভোটকেন্দ্র ছিল যেগুলোতে ১ থেকে ১০টি বেশি ভোট পড়েনি। পাহাড়ে এই শূন্য ভোটের ঘটনা শেখ হাসিনার অন্যায় শাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

২৭ ভোটকেন্দ্রে শূন্য ভোট নিয়ে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের অংশবিশেষ।


অপরদিকে, দেশের বিরোধী দলগুলো হাসিনার উক্ত ডামি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলেও ভোট বানচাল করে দেয়ার মতো তাদের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে হাসিনা তার পরিকল্পিত ডামি নির্বাচন সম্পন্ন করে পূনরায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলে। আর ক্ষমতায় বসার পরপরই শুরু করে দেয় বিরোধী দলগুলোর উপর নিপীড়ন-নির্যাতনের স্টিম রোলার, যার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণও বাদ যায়নি। আর সমানতালে চলতে থাকে দুর্নীতি, অনিয়মসহ গণবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড। এমতাবস্থায় হাসিনা বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।

৫ জুন সরকার হাইকোর্টকে দিয়ে বাতিলকৃত মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় দিলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলন শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে রূপ নেয় এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-গণ আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পতন ঘটে হাসিনা সরকারের।

বলা যায়, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ২৭টি কেন্দ্র ভোটশূন্য করার মাধ্যমে পাহাড়ের জনগণ ৭ জানুয়ারির প্রহসনের ডামি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়। দেশের অন্য কোথাও হাসিনা সরকারের ওপর এত বড় ক্ষত সৃষ্টি করে দিতে পারেনি। কোন হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতিতে দমে না গিয়ে প্রহসনের নির্বাচন বয়কটের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের এই অবদান দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More