৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পিসিপির ওয়েবসাইট উদ্বোধন ও অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

0

নিজস্ব প্রতিনিধি ।। প্রতিষ্ঠার ৩২তম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর অফিসিয়াল ওযেবসাইট (pcpcht.org) উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনার মাধ্যমে এই ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মে ২০২১) রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত আলোচনার শুরুতে ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করেন বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান।

পরে “করোনা পরিস্থিতিতে পাহাড়-সমতলে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম” এই আলোচ্য বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি অংগ্য মারমা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনিক প্রমুখ। পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমরা একটি সংযুক্ত বিশ্ব ব্যবস্থায় বাস করছি। আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলো যেমন বিভিন্ন দেশের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে, তেমনি জাতীয় ঘটনাগুলোও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলো একে অপরের সাথে সংযোগ ঘটাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে পরষ্পরের সাথে সংযুক্ত হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ওয়েবসাইট চালু করতে যাচ্ছে এটি এখনকার পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ এবং দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী সংগঠনসমূহেরও পিসিপির এই উদ্যোগ অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

এছাড়া তিনি তার আলোচনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং ফ্যাসিবাদী শাসন অবসান ঘটাতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ শক্তির বিকল্প নেই বলে অভিমত দেন। তিনি ২০১৯ সালে ঢাকায় গুমের শিকার হওয়া ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া ইউপিডিএফ এর অন্যতম সংগঠক শহীদ মিঠুন চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন বুদ্ধিজীবী, সংগ্রামী ও আন্দোলনের গভীর চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তার অনুপস্থিতি পূরণ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন।

সাবেক ছাত্রনেতা অংগ্য মারমা বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহসহ দেশের সকল সংখ্যালঘুদের বাঙালি জাতিয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে। ১৯৮৯ সালে যদি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আবির্ভাব না হতো, তাহলে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিচালিত হতো না। পিসিপি’র নেতৃত্বে ছাত্র গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে পাহাড়ে অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। প্রতিষ্ঠার শুরুতে পিসিপি’র মধ্যে দুটি ধারা বিদ্যমান ছিল- একটি সুবিধাবাধী আপোষকামী অপরটি আপোষহীন প্রগতিশীল। ১৯৯৭ সালের চুক্তির পরবর্তী সময়ে এটি আরও স্পষ্ট হয়। পিসিপির নাম ভাঙিয়ে বর্তমানে আরো গুটিকয়েক ছাত্র সংগঠন দেখতে পাচ্ছি যারা আদতে সুযোগ সন্ধানী, সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করছে। অপরদিকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে আন্দোলনরত পিসিপি আপোষহীনভাবে ছাত্র সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

পিসিপি সভাপতি সুনয়ন চাকমা তার শুভেচ্ছা বার্তায় সংগঠনের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যারা সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই পর্যন্ত সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন সেই সকল সাবেক-বর্তমান সহযোদ্ধা, শুভাকাঙ্খী-সমর্থক, বন্ধু প্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র সমাজের প্রতি রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানান। এছাড়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, জেল-জুলম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি পিসিপি অগ্রযাত্রায় পেছনের পাহাড়ে ছাত্র সমাজের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে সামিল হওয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে আহ্বান জানান।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল কবির বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার সাধারণ জনগণের জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য সুনিশ্চিত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের ন্যায্য দাবিও সরকার পূরণ করতে পারেনি বরং হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ছাত্র-লেখক-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষদের গ্রেফতার করে হয়রানি করেছে এবং এই আইনে গ্রেফতার হওয়া মোস্তাককে বস্তুত কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে চিম্বুক পাহাড় দখলের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে এবং সীতাকুন্ডে এস. আলম গ্রুপ ত্রিপুরাদের ভূমি বেদখল করার পায়তারা করে যাচ্ছে।

আতিফ অনিক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি দমনমূলক নীতি। এই আইনের মাধ্যমে সরকার জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে।

তিনি পাহাড়ে সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাহাড়িদের উপর অন্যায় অত্যাচারকে জাতিগত নিপীড়ন ও শ্রেণী বৈষম্য বলে মন্তব্য করেন।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম, দেশীয় ও আন্তির্জাতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ প্রায় তিন ঘন্টার আলোচনার মধ্যে দিয়ে অনলাইন আলোচনা শেষ হয়।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More