খাগড়াছড়িতে ৫ নারী সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন

৯ এপ্রিল স্ব স্ব জাতিসত্তার জাতীয় পোশাক পরিধান কর্মসূচিসহ ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা

0

Press confernence, 30.03.17

খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫ নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, নারী আত্মরক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি’র আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৯ এপ্রিল স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে স্ব স্ব জাতিসত্তার জাতীয় পোশাক পরিধান কর্মসূচিসহ ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতি চাকমা হত্যার বিচার-হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী ধর্ষণ-খুন-নির্যাতন বন্ধের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ জেলা কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে- পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রদানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ২৮ এপ্রিল ২০১৭ সমাবেশ; ক্ষুদ্র ঋণের নামে অমানবিক শোষন বন্ধের দাবি, উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, মিল ফ্যাক্টরিতে নারীর নিরাপত্তা, নারী জনপ্রতিনিধিদের অধিকতর উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত করা, বিচার সালিশে তাদের অংশগ্রহণের দাবিসহ ইত্যাদি নানা দাবিতে আগামী ১মে ২০১৭ জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবী সমাবেশ; ‘প্যালেস্টাইন সংহতি দিবস’-এ অংশগ্রহণ করার কারণে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা তুলে নেয়ার দাবিতে আগামী ১ জুন আধ ঘন্টা ব্যাপী প্রতীকী রাজপথ অবরোধ/রাজপথে অবস্থান ধর্মঘট; আগামী ১ মে হতে ১২ জুন পর্যন্ত মাস ব্যাপী গণসংযোগ ও পাড়া-গ্রামে প্রতিবাদী নারী সমাবেশ এবং আগামী ১২ জুন কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচারসহ নারী নির্যাতন বিরোধী সমাবেশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ খাগড়াছড়ি সদরের শান্তিনগরে ভাড়া বাসায় নিজকক্ষে খাগড়াছড়ি কলেজের মেধাবী ছাত্রী ইতি চাকমাকে নির্মমভাবে খুনের ঘটনা আমাদের আতংকিত করেছে। আমরা শিউরে উঠেছি এই ভেবে যে, নিজ বাসাতেও আমাদের নারী সমাজ আজ নিরাপদ বোধ করছে না। আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভাবনা বিষয় হলো, নারীর ওপর খুন ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হবার পরে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা হয়না। কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন চিহ্নিত অপরাধী লেঃ ফেরদৌস কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। কিন্তু ২১ বছর পরেও কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী গং’কে গ্রেপ্তারর করা হয়নি। কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন।

এতে আরো বলা হয়, আর মাত্র কিছুদিন পরেই পাহাড়ের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু) উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বারেবারে দেখছে যে, উৎসব ঘনিয়ে এলে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নানা উছিলায় সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে পাহাড়ে উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। এবছরও আমরা তার ব্যতিক্রম দেখছি না। গত ২৪ মার্চ বান্দরবানের লামায় বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করা হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়িতে পরপর কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ মার্চ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে কোনো ধরনের উস্কানী ছাড়াই দুই পাহাড়ি কলেজ ছাত্রকে চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক অংশটি হামলা করে।

লিখিত বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, আমরা আরো বেশি উদ্বিগ্ন যে, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর একজন চিহ্নিত নেতা সামাজিক গণমাধ্যমে একজন কলেজ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক ভিডিও প্রকাশ করেছে। উক্ত ব্যক্তি খাগড়াছড়ি কলেজের শিক্ষিকা অর্জিতা খীসার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার এথিকস বজায় না রেখে এবং কোনো প্রকার প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়াই একটি ভিডিও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এই ধরনের নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের ধারণা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক এই উগ্রবাদী অংশটি বৈসাবি উৎসবকে বানচাল করে দেয়ার জন্য নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানীমুক্ত পরিবেশে নিরাপদে বৈসাবি পালন করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা, সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও ধরপাকড়ের নামে রাতে বিরাতে ঘরবাড়ি তল্লাশি, ছাত্র-যুবকদের আটক-গ্রেফতার বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, নারী আত্মরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব উক্রাচিং মারমা, সাজেক নারী সমাজের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শান্তি দেবী চাকমা ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমা।
—————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More