সাজেকের বাঘাইহাটে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ১, আহত ১২, কর্মসূচি ঘোষণা

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাটে বিক্ষোভরত জনতার উপর সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে (নব্যমুখোশ-সংস্কারবাদী) সন্ত্রাসীদের গুলিতে শান্তি পরিবহন বাসের এক হেলপার নিহত ও আরো অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন ২০২৪) এ ঘটনা ঘটে।
উক্ত ঘটনায় ইউপিডিএফ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটি আগামীকাল (বুধবার) কালো ব্যাজ ধারণ, শোক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

জানা যায়, গত ৭ জুন থেকে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় মুখোশ-সংস্কারদের একটি সশস্ত্র দল বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান করে জনগণের ওপর নিপীড়ন, হুমকি-ধমকিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের নানা অত্যাচারের ভয়ে স্থানীয় লোকজন বাঘাইহাট বাজারে যেতে পারছিল না। এর মধ্যে সন্ত্রাসীরা উজো বাজার ও মাচলঙ বাজারে ব্যবসায়ীদেরকে পাইকারি মালামাল নেওয়া বন্ধ করে দিলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে।
আজ (মঙ্গলবার) সকালে বাঘাইহাট বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনে উজো বাজার ও মাচলং বাজারে নিতে চাইলে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা তাতে বাধা দেয় এবং ক্রয়কৃত মামলাল কেড়ে রাখে। এতে উক্ত ব্যবসায়ী ও এলাকার পাহাড়ি—বাঙালি সাধারণ জনগণ বিক্ষুদ্ধ হয়।

এ খবরটি জানাজানি হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত জনতা বাঘাইহাট বাজারে এসে জড়ো হয় এবং সন্ত্রাসীদের অপকর্মের প্রতিবাদে পর্যটন সড়কে ও বাঘাইহাট বাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে এবং পর্যটন সড়কটি অবরোধ করে।

এ সময় সন্ত্রাসীদের সাথে বিক্ষোভরত জনতার মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হলে প্রথমে সন্ত্রাসীরা কয়েকজন নারীর ওপর লাঠিপেটা করে।
এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা আরো উত্তেজিত হয়ে বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরদার করে। জনতার বিক্ষোভের মুখে সন্ত্রাসীরা বাঘাইহাট বাজার থেকে পালিয়ে বাঘাইহাট জোনের পাশের স্কুলে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপরও জনতার বিক্ষোভ চলতে থাকে। পরে বেলা ২টার সময় সন্ত্রাসীরা বিক্ষুব্ধ জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে শান্তি পরিবহন বাসের হেলপার মো. নাঈমসহ অনেকে আহত হয়।
এরপর গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত মো. নাঈমকে উদ্ধার করে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৩:৪৮টা তার মৃত্যু হয়।
নিহত মো. নাঈম-এর বাড়ি ফটিকছড়ির নাজিরহাট বলে জানা গেছে।
সন্ত্রাসীদের হামলায় আহতদের মধ্যে ১২ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ১.রিপনা চাকমা (৩৭), ২. অরুন চাকমা (৩০), ৩. বিনয় চাকমা (৪০), ৪. সুরন চাকমা (৩০), ৫. দেব রঞ্জন চাকমা (৪৫), ৬. মনিচা চাকমা (১৩), তিনি ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী, ৭. সাধন চাকমা (৪৫), ৮. মিতা চাকমা (৩০), ৯. সুবিনয় চাকমা (৩৫), তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন; ১০. চিক্কো মনি চাকমা (৩০), ১১. সোনা মনি চাকমা (২৫), ১২. দুলেই চাকমা, তিনি হাটুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

এছাড়া কয়েকজন বাঙালিও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
উক্ত হামলার পর সন্ত্রাসীরা বাঘাইহাট জোনে গিয়ে আশ্রয় নেয় বলে জানা গেলেও শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
ইউপিডিএফের নিন্দা ও প্রতিবাদ
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙামাটি ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা এক বিবৃতিতে বাঘাইহাটে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে শান্তি পরিবহণের এক হেলপার নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে হত্যকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ারও দাবি জানান।
তিনি গত ৭ জুন থেকে ঠ্যাঙাড়েরা বাঘাইহাট বাজারের একটি স্কুল ঘরে সশস্ত্রভাবে অবস্থান করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসের কারণে বর্তমানে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী ঠ্যাঙাড়েদেরকে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সাধারণ নিরীহ জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘কীভাবে কিছু লোক বাঘাইহাট বাজারের মতো প্রকাশ্য স্থানে দিনের পর দিন সশস্ত্রভাবে অবস্থান করতে পারে এবং সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবন জীবিকার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে?’
তিনি গণপ্রতিরোধের জোয়ারে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ও তাদের আশ্রয়দাতারা ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করেন।
ইউপিডিএফ নেতা সচল চাকমা সাজেকবাসীর দাবি ও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
কর্মসূচি ঘোষণা
এদিকে বাঘাইহাটে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর গুলিতে নিহত মো. নাঈম-এর হত্যাকারীদের গ্রেফতার-শাস্তি ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটি প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আজ বিকেলের দিকে সাজেকের উজো বাজারে অনুষ্ঠিত জনতার একটি সমাবেশ থেকে কমিটির সদস্য সচিব ও সাজেক ইউনিয়ন কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠন গঠনের ও আগামীকাল কালো ব্যাজ ধারণ, শোক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন আজ ঠ্যাঙাড়েদের নির্বিচার গুলিতে শান্তি পরিবহণের হেলপার মো. নাঈম নিহত ও বেশ কয়েকজন পাহাড়ি ও বাঙালি আহত হয়েছেন।
তিনি অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার-শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, গত ৭ জুন থেকে ঠ্যাঙাড়েরা বাঘাইহাটে সশস্ত্রভাবে অবস্থান ও জনগণের ওপর জুলুম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।