খাগড়াছড়িতে শহীদদের স্মরণ অনুষ্ঠানে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ পিসিপি’র

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪
খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে ‘রক্তাক্ত জুলাই’ ও ‘স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে’ শহীদদের সম্মানে ‘দমন পীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ের প্রতিবাদী ছাত্র-যুব-নারী সমাজ’ এর ব্যানারে আয়োজিত স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
আজ সোমবার (১৯ আগস্ট ২৪) পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি অংকন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নেতৃদ্বয় বলেন, গতকাল খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গীস্কয়ারে ‘রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪’ ও ‘স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ড ২০১৮’-এ নিহত আবু সাঈদ-মুগ্ধ, তপন-এল্টন-পলাশসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিহত সকল শহীদদের সম্মানে ‘দমন পীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ের প্রতিবাদী ছাত্র-যুব-নারী সমাজ’ এর ব্যানারে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ মুহুর্তে সন্ত্রাসীরা গুলতি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অংশগ্রহণকারী লোকজনের ওপর হামলা চালায়।
বিবৃতিতে হামলার ঘটনার বিবরণ দিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের শেষ মুহুর্তে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টার দিকে চেঙ্গীস্কোয়ারের পাশে অবস্থিত এমএন লারমা ভাস্কর্যের পাশে ফ্রেন্ডস ওয়েলফেয়ার ক্লাব ও Soumyo fashion (সৌম্য ফ্যাশন)-এর দৌতালা বিল্ডিং থেকে সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর ইটপাটকেল ও গুলতি নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের অর্তকিত হামলায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমাসহ অন্ততপক্ষে ৪ জন আহত হয়।
এর আগে অনুষ্ঠান শুরু থেকে এমএন লারমার ভাস্কর্যের পাশে ভারি অস্ত্রসহ মুখোশ ও সংস্কারবাদী সন্ত্রাসী জুকি চাকমা ও কালেক্টর অর্জুনের নেতৃত্বে ধনঞ্জয় ত্রিপুরা, সুশান্ত ত্রিপুরা, রেমো ত্রিপুরা, সুনেন্টু, জ্বলন্তসহ চিহ্নিত ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী অবস্থান নিয়েছিল বলে জানা যায়।
এক পর্যায়ে গুলকানা পাড়া থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ৭ জনকে ধরে সন্ত্রাসীরা এম এন লারমা মূর্তির পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে বিভিন্নভাবে গালিগালাজ ও হয়রানি করে এবং পরবর্তীতে সমাবেশে না আসার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ২০১৮ সালের ১৮ই আগস্ট স্বনির্ভরে সেনাসৃষ্ট মুখোশবাহিনী ও সংস্কারবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক বর্বর হত্যার শিকার হন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তৎকালীন নেতা তপন, এল্টন ও যুবনেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জন। দীর্ঘ ৬ বছরেও খুনিদের এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অথচ জনগণের চিহ্নিত খুনিরা প্রশাসনের নাকের ডগায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একটি অংশ এ সন্ত্রাসীদের দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রেখেছে।
বিবৃতিতে পিসিপি’র দুই নেতা আরো বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো অঘোষিত সেনাশাসন জারি রয়েছে। প্রতিবাদী সভা-সমাবেশে বাধাদান, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, প্রশাসনের নীরব ভূমিকা পালন বরাবরই সেনাশাসনের প্রকৃত চিত্রকে তুলে ধরে। সত্যিকারের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এবং পাহাড়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দিতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বন্ধ করতে হবে। না হলে দেশে প্রকৃত অর্থে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।
নেতৃদ্বয় অবিলম্বে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের চিহ্নিত খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।