ঢাকায় পাহাড়ি পেশাজীবীগণ লুঙুদু সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে
ঢাকা : পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় চাকুরির উদ্দেশ্যে বসবাসরত পেশাজীবীবৃন্দ আজ শনিবার (৩ জুন) সকালে ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে লুঙুদুতে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার পুলক জীবন চাকমা, বিশিষ্ট পেশাজীবি জুম্ম নেতা শিবাশিষ খীসা, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রমিজ চাকমা, এডভোকেট নিকোলাস চাকমা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের শিক্ষক সুকোমল বড়ুয়া প্রমুখ।
সমাবেশে প্রায় ৫০ জনের অধিকা জুম্ম চাকুরিজীবি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদ বিক্ষোভে প্রদর্শনকৃত ব্যানারে লেখা ছিল- ০২জুন, ২০১৭ রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লুঙুদু উপজেলায় শান্তিপ্রিয় জুম্ম জনগণের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন।
মানববন্ধনের প্রতিবাদ বিক্ষোভে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিগণ বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। তাতে লেখা ছিল- যে কোনো উছিলায় বারবার নিরীহ আদিবাসীদের উপর হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ,লুটতরাজ বন্ধ কর, Justice for Arson and Killing of Innocent Indigenous People in Lungudu CHT. আর্মি ও পুলিশ আদিবাসীদেরও, শুধু সেটলারদের না।
মানববন্ধনকে উপলক্ষ করে পাহাড়ি পেশাজীবিদের পক্ষ থেকে একটি প্রচারপত্রও ঢাকায় সচেতন জনগণ সাংবাদিকদের কাছে বিলি করার জন্য প্রকাশ করা হয়। উক্ত প্রচারপত্রের শিরোনামায় বলা হয়- ০২ জুন, ২০১৭ রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লুঙুদু উপজেলাতে শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি আদিঅধিবাসী জনগণের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার প্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ পাহাড়ি আদিঅধিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বিবৃতি।
উক্ত প্রচারপত্রে বলা হয়- লুঙুদু তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের উপর এ ধরণের বর্বরোচিত হামলা এবারই প্রথম নয়। আশির দশকে এখানে সেটলার বাঙালিদের বসতিস্থাপনের পর থেকে পাহাড়িদের উপর এ ধরণের হামলা চালানো হচ্ছে। ১৯৮৯ এর ০৪ মে, ১৯৯২ সালে ও ১৯৮৬ সালে ও সর্বশেষ সর্বশেষ গত ০২ জুন, ২০১৭ তে লুঙুদুতে এ ধরণের নৃশংস ঘটনা ঘটানো হলো। এ ঘটনায় ০১ জনকে কুপিয়ে জখম করে হত্যা করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে ও শতশত পাহাড়ি আহত হয়েছে বলে খবর এসেছে। অনেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও জঙ্গলের ভিতর খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
মানববন্ধনে প্রদর্শিত ব্যানার ও প্রচারপত্রে ৫ দফা দাবিনামা পেশ করা হয়। দাবিনামায় বলা হয়-
১.অবিলম্বে লুঙুদু সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
২. নূরুল ইসলাম নয়নের প্রকৃত হত্যাকারীদের তদন্ত করে খুঁজে বের করা হোক এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হোক।
৩. খাগড়াছড়িতে উক্ত হত্যার উছিলায় সুদূও লুঙুদুতে নির্বিচারে নিরীহ আদিঅধিবাসীদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আক্রমণকারীদের এবং ইন্ধনদাতাদের বিচার চাই।
৪. জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হোক।
৫. অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদি অধিবাসীদের উপর সকল প্রকার নিপীড়ন ও মানবাধিকার লংঘন চিরতরে বন্ধ হোক।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।