দোবাকাবা-নভাঙায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন
রাঙামাটি প্রতিনিধি ।। কাউখালির দোবাকাবা-নভাঙা এলাকায় সেনা ক্যাম্প নির্মাণের কাজ বন্ধের দাবিতে রাঙামাটি শহরে মানববন্ধন করেছে দুই গ্রামের অধিবাসীরা।
আজ ৩০ নভেম্বর, সোমবার, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় এক ঘন্টা রাঙামাটি শহরের ডিসি অফিসের সামনে তারা উক্ত কর্মসুচি পালন করেন।
এ সময় উষাতন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাবকে ইউপি মেম্বার পাইক্রামা মারমা, জায়গার মালিক অরুণ বিকাশ চাকমা, নলীন কুমার চাকমা, চন্দ্র কুমার চাকমা ও সূচনা চাকমা।
পাইক্রামা মারমা অবিলম্বে ক্যাম্প নির্মাণ কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ক্যাম্প থাকলে আমাদের চলাচলে অসুবিধা হয়, আমরা তোমাদের ভয় পাই।’
জমির মালিক অরুণ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আমার জায়গায় আমি ক্যাম্প চাই না। এখানে আমি গাছ বাঁশের বাগান সৃজন করেছি। আমার বাগান, অথচ এখন আমি সেখানে প্রবেশ করতে পারছি না।’
তিনি তার জায়গা থেকে আর্মিদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।
নভাঙা গ্রামের বাসিন্দা ছায়া রাণী চাকমা (সূচনা মা) বলেন, ‘তোমরা থাকলে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সেখানে ক্যাম্প হলে আমরা লাকড়ি, বন্য তরিতরকারি, বাচ্চুরি (বাঁশ কোড়ল) ইত্যাদি আনতে কিংবা গরু ছাগল চড়াতে বনে প্রবেশ করতে পারবো না। সব সময় ভয় ও আতঙ্কে থাকতে হবে।’
তিনি তাদের এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ করে আর্মিদের ফিরে যাওয়ার দাবি জানান।
নলীন কুমার চাকমা বলেন, ‘নভাঙা-দোবাকাবায় সেনা ক্যাম্প হলে আমাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ আমরা গরীব মানুষ, জীবনধারণের জন্য বন ও ছড়ার (নদী) উপর নির্ভরশীল। ক্যাম্প হলে আমরা সেসব থেকে বঞ্চিত হবো। বনে প্রবেশ করতে পারবো না এবং দোবাকাবা ছড়ায় বাঁধ দিয়ে সৃ্ষ্ট জলাধারটি ব্যবহার করতে পারবো না। আর এটা ব্যবহার করতে না পারলে আমরা বাজারে গাছ ও বাঁশ নিতে পারবো না।’
তিনি তাদের পেটে লাথি না মারার জন্য সেনাবাহিনী তথা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
চন্দ্র কুমার চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, ‘ক্যাম্প দেয়ার ব্যাপারে আমাদের সাথে কোন আলোচনা করা হয়নি, মতামত নেয়া হয়নি। কি কারণে ক্যাম্প দেয়া হচ্ছে তাও বলা হয়নি। আর্মিরা এসেই বাগানে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছে। বাগানের মালিকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আর্মিরা ক্যাম্প বানিয়ে সেখানে থাকলে বাগান মালিকদের বহু বছরের খাটুনি সব পানিতে যাবে। তারা তাদের কঠিন শ্রমের ফল ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হবে।’ এত বড় অন্যায় না করার জন্য তিনি আর্মিদের প্রতি অনুরোধ জানান।
ক্যাম্প স্থাপন কাযক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়ে উষাতন চাকমা বলেন, নভাঙা-দোবাকাবা এলাকায় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, যার জন্য সেখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
উষাতন চাকমা ছাড়া অন্যরা চাকমা ভাষায় বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর থেকে কাউখালির ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়েনের ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত দোবাকাবা-নভাঙা এলাকায় কোন প্রকার আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া জোরপূর্বক জমি দখল করে সেনা ক্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।