চার দাবিতে পানছড়ির ৬টি বিজিবি ক্যাম্পে সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা গণঅধিকার রক্ষা কমিটির

0

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

নারীসহ ৬০০ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, সুমন চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি, বিজিবিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হয়রানি-জুলুম বন্ধসহ চার দফা দাবিতে ১৬ অক্টোবর থেকে পানছড়ির ৬টি বিজিবি ক্যাম্পে সকল ধরনের সহযোগিতা বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

আজ রবিবার (১৫ অক্টোবর ২০২৩) সকালে ‌‘বিশ্ব গ্রামীন নারী দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে এবং গণঅধিকার রক্ষা কমিটির ১৫ দিনের আল্টিমেটাম শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে লোগাং বাবুরা পাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় সড়কে আয়োজিত গণসমাবেশ থেকে এই অসহযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়।

সীমান্ত টহলের নামে গ্রামবাসীর ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলবে না’ এই শ্লোগানে এবং ‌‘নিজেদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হোন, আন্দোলনে যোগ দিন’ এই আহ্বানে উক্ত গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের পরিবেশনায় প্রতিবাদী নৃত্যের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সদস্যরা প্রতিবাদী নৃত্য, গান ও নাটিকা প্রদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন নানা শ্লোগানে সমাবেশ স্থল প্রকম্পিত করেন।

সমাবেশে গণ অধিকার রক্ষা কমিটি যুগ্ম আহ্বায়ক ২নং চেঙ্গি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমার সভাপতিত্বে ও কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রমেল মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সুজাতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা এবং সংহতি বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা।

গণঅধিকার রক্ষা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সুজাতা চাকমা বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক ১৫ অক্টোবর গ্রামীণ নারী দিবস ও ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতিষ্ঠিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীরা সব দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে এবং চরম বৈষম্যর শিকার হচ্ছে। তাছাড়া ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো ঘটনাতো প্রতিনিয়ত ঘটছেই। শাসকগোষ্ঠী সবসময় পাহাড়ি জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় পানছড়িতে নারীসহ সাধারণ জনগণকে বিজিবির সদস্যরা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় উল্লেখ করে আরো বলেন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, আটক সুমন চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তিসহ জুলুম-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর গণঅধিকার রক্ষা কমিটির দেওয়া আলটিমেটামের পরও বিজিবি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়া আজকে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি জনগণকে কমিটির নতুন কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।

নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা পাহাড়ে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী পাহাড়ি নারীদের হুমকি উল্লেখ করে বলেন, গতমাসে রাঙামাটিতে ছয় সেনা সদস্য কর্তৃক এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এখনো হয়নি।সম্প্রতি রাঙামাটির লংগদুতে সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল ও বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।  

তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর বিজিবির টাকা ছিনতাইয়ের কারণে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৫ সেপ্টেম্বর বিজিবি কর্তৃক নারীসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৬০০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানির মূলক মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

সংহতি বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা বলেন, অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। অধিকার আন্দোলন, লড়াই সংগ্রাম করে ছিনিয়ে আনতে হয়। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে, পেছনে যাওয়ার আর কোন পথ নেই। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা নাহলে আবারো ২৪ সেপ্টেম্বরের মত ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যদি একজন মাদক ব্যবসায়ী কিংবা অস্ত্র চালানকারী অথবা বর্ডারে এত টাকাসহ আটক করত তাহলে আমরা চুপ করে বাড়িতে বসে থাকতাম। যাকে আটক করেছে তার অবৈধ কোন কিছুই নেই। বৈধ দেশীয় মুদ্রাসহ এবং দেশের ভেতরে এভাবে আটক করা ঠিক নয়।

তিনি গত ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত ৬০০ জনের বিরুদ্ধে বিজিবির দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত বিজিবি সদস্যদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং জনগণকে গণঅধিকার রক্ষা কমিটির আন্দোলনের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

সমাবেশের সভাপতি অনিল চন্দ্র চাকমা গত ২৪ সেপ্টেম্বর লোগাং বিজিবি কর্তৃক সাড়ে ১২ লাখ টাকাসহ রিন্টু চাকমাকে আটক এবং ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০০ জনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক দায়েরের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে বসবাস করেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে আজ জনগণ সামান্য টাকা নিয়েও চলাফেরা করতে পারছে না। একজন মানুষের কাছে লাখ টাকা থাকা বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যাপার। ইচ্ছে করলে বিজিবি সদস্যরা কাউকে অন্যায়ভাবে আটক করতে পারে না, এই অধিকার সংবিধান বিজিবিকে দেয়নি।

তিনি গণসমাবেশের মঞ্চ থেকে চার দফা দাবি না মানা পর্যন্ত পানছড়ি উপজেলার লোগাং বিজিবি ক্যাম্পসহ সীমান্ত এলাকার ৬টি বিজিবি ক্যাম্পে জনগণের সকল ধরনের সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দেন।

যেসব বিজিবি ক্যাম্পগুলোতে সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয় সেগুলো হলো: ১) শনখোলা পাড়া বিজিবি ক্যাম্প, ২) নন্দপাড়া বিজিবি ক্যাম্প, ৩) রুপসেন পাড়া বিজিবি ক্যাম্প, ৪) ডাইন চন্দ্র পাড়া বিজিবি ক্যাম্প, ৫) দুধুকছড়া বিজিবি ক্যাম্প ও ৬) লোগাং বিজিবি ক্যাম্প।

তিনি ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচি সফল করতে উক্ত ৬টি ক্যাম্পের সদস্যদের জন্য ভোগ্যপণ্য, খাদ্য-দ্রব্য ও লাকড়িসহ কোনধরনের দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ না করা, তাদের কাছে ঔষুধপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রয়সহ যাবতীয় ক্রয় বিক্রয় ও আর্থিক লেনদেন বন্ধ রাখা, তাদেরকে সিএনজি, মহেন্দ্র, টমটম, মোটরসাইকেল ইত্যাদি কোন যানবাহনে না তোলা, বিজিবির উক্ত ক্যাম্পের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখা এবং মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে তাদেরকে টাকা লেনদেন বা আদান প্রদান করতে না দেয়ার জন্য পানছড়িবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে একটি র‌্যালি করা হয় এবং লাঠি, বল্লম দিয়ে দালাল-ছিনতাইকারীদের কুশপুত্তলিকায় আঘাত করে প্রতিবাদ জানানো হয় এবং আগুন দিয়ে কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।

এদিকে, মরাটিলা এলাকা থেকে সমাবেশে আসার পথে লোকজনকে নব্যমুখোশদের একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত বাধা প্রদান ও হুমকি-ধমকি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে মরাটিলা এলাকার লোকজন সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় লাল্লো চাকমা, পিংকু চাকমা, অমর জীবন চাকমাসহ দুর্বৃত্তরা ১০/১২ জন ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More