খাগড়াছড়িতে ৪ সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ, সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৪ আগস্ট ২০২৪
অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবিতে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির সমর্থন জানিয়ে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফভুক্ত চার সংগঠন।
আজ রবিবার (৪ আগস্ট ২০২৪) ১০:৪৫টার সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ শতাধিক ছাত্র-যুবক ও নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশের আগে “পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী সমাধান” শ্লোগানে স্বনির্ভর বাজার থেকে একটি চেঙ্গীস্কোয়ারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সভাপতি ক্যামরণ দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারশনের জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাংগঠনিক সম্পাদক তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা।

কণিকা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এর থেকে অবসান চায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ মনে করে যতদিন পর্যন্ত এ অঞ্চলে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়নেরই ধারাবাহিক অংশ। সুতরাং এই রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের সমস্যা হলো রাজনীতি সমস্যা। কাজেই দমন-পীড়ন জারি রেখে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না, রাজনীতিকভাবে এর সমাধান করতে হবে।
সমাবেশ থেকে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের ৩৬৭ জন খুনসহ সারাদেশে ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান।

এন্টি চাকমা বলেন, কোটা আন্দোলন আজ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রূপ নিয়েছে। সরকার আন্দোলন দমনে শিশুসহ ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এই গণহত্যার পর সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোন বৈধতা নেই।
তিনি আরো বলেন, আজকে ২৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও এ সরকার কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের বিচার করেনি। উপরন্তু আদালতের মাধ্যমে অপহরণ মামলা খারিজ করে দিয়ে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের দায়মুক্তি দেয়া হযেছে। তিনি কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনাটি আর্ন্তজাতিক তদন্তের দাবি জানান।

অনিমেষ চাকমা বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার যুগ যুগ ধরে পাহাড়ে যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে এসেছে আজকে একইভাবে সমতলেও রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দিয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। কাজেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। যতদিন এ সরকারের পতন হবে না ততদিন ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ছাত্র আন্দোলনে সকল শদীহদের লাল সালাম জানাই।
২০১৮ সালের ১৮ আগষ্ট স্বনির্ভরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে সংঘটিত ৭ খুনের ঘটনা স্মরণ করে অনিমেষ চাকমা বলেন, দীর্ঘ বছরেও প্রশাসন এ ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।

তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সাবেক ছাত্র নেতা বিপুল চাকমাসহ চার তরুণ নেতাকে এই ফ্যাসিবাদি সরকারের মদদে হত্যা করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব সমাজকে দমিয়ে রাখতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হলেও ছাত্র সমাজ তাতে দমে যায়নি। আগামীতেও হত্যা-গুম করে ছাত্র সমাজকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি করেন।
সমাবেশ শেষে চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে আবারো মিছিল নিয়ে স্বনির্ভরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হয়।
এছাড়া একই দাবিতে জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা, মানিকছড়ি, মহালছড়ি ও লক্ষীছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।