সদ্য মুক্ত ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে সংবর্ধনা

মুক্তি পাওয়ার পর মাইকেল চাকমা।
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৯ আগস্ট ২০২৪
রাষ্ট্রীয় গুমের শিকার হয়ে ৫ বছর ৩ মাস পর সদ্য মুক্তি পাওয়া ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ।
আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট ২০২৪) জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ বন্দোবস্তের মাধ্যমে ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা ইউনিট ও গণফ্রন্ট-এর চার শতাধিক নেতা-কর্মী বিভিন্নভাবে যুক্ত হন।
মাইকেল চাকমা ভিডিও কলে পাঁচ বছর আগে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রাষ্ট্রীয় সংস্থার সাদা পোশাকধারী কর্তৃক তুলে নিয়ে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রেখে শারীরিক মানসিক অকথ্য নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেন। বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে অভুক্ত দুর্বল শরীরে ভিক্ষুকের মতো কিভাবে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছান সেই করুণ কাহিনী শোনান। পিন পতন নিরবতার মধ্যে সহযোদ্ধারা তার বক্তব্য শোনেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও পার্টি ও জনগণের প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষায় তার দৃঢ়তার কথা শুনে সহযোদ্ধারা অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। এত বছর পর প্রিয় সহযোদ্ধাকে ফিরে পাওয়ায় সবাই ছিল আবেগে আপ্লুত। কান্নাভেজা কণ্ঠে সহযোদ্ধারা বক্তব্য দেন। অনেকের গুছিয়ে কথা বলতেও হচ্ছিল।

জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মাইকেল চাকমা। পাশে ফয়জুল হাকিমসহ অন্যান্যরা। ৩০ জুন ২০১৪, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা।
মাইকেল চাকমা পার্টির নীতি-আদর্শ ধারণ করে সবাইকে লড়াই সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার জোর আহ্বান জানান। সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষী যারা তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করেছেন এবং বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
দীর্ঘ অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকার ফলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে, কণ্ঠেও এসেছে পরিবর্তন। শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও অন-লাইনে সহযোদ্ধাদের পেয়ে আবেগ আপ্লুত মাইকেল একটানা তিন ঘণ্টার অধিক কথা বলেন। তার ওপর চলা অবর্ণনীয় নির্যাতনের কাহিনী শোনান। তার অবিচল দৃঢ়তা দেখে প্রহরারত নিরাপত্তারক্ষী ও নির্যাতনকারী কর্তা ব্যক্তিরাও অবাক হয় এবং নৈতিকভাবে হার মানতে বাধ্য হয়। এক কর্মকর্তা একান্তে মাইকেলের নিকট স্বীকার করেন যে, সরকারি চাকরি করার কারণে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে নিপীড়ন চালাতে হচ্ছে। অপরাধী মাইকেল নন, তাকে নির্যাতনকারীরাই মাইকেলের নিকট অপরাধী। নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যেও দু’এক জনের মধ্যে মানবিক গুণাবলী মাইকেল দেখতে পেয়েছেন।
তার বিবরণ শোনার পর আলোচনায় যুক্ত সহযোদ্ধারা এভাবে মন্তব্য করেন, ‘আমরা নেলসন ম্যান্ডেলার বন্দীদশার বিবরণ পড়েছি। হো চি মিনের কারাজীবনের কথাও জানি। কিন্তু আমাদের এক সহযোদ্ধাও উঁচুমাপের বিপ্লবীর দৃঢ়তা প্রদর্শন করে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর সেবাদাসদের হার মানিয়েছেন, আমরা তার বাস্তব প্রমাণ পেলাম। সহযোদ্ধা মাইকেল আমাদের সবার সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের এ সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। আমাদের বিজয় অবধারিত।’

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা যুব সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মাইকেল চাকমা। ২৯ নভেম্বর ২০১৩, খাগড়াছড়ি
মাঝখানে আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আলোচনা চলে। এতে ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, অংগ্য মারমা, রতন বসু, সুমেন চাকমা, বিলাস চাকমা ও সুনীল চাকমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। শুরুতে স্বাগত সম্ভাষণ জানান হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা।
ইউপিডিএফ জানিয়েছে, মাইকেল চাকমা মেডিক্যাল চেক-আপ করে পরিবার ও বন্ধুপরিজনের সাথে মিলিত হবেন। মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে তার অপহরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
মাইকেল চাকমা ইউপিডিএফের সংগঠক ছাড়াও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ)-এর সাধারণ সম্পাদক।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় আসলে কল্যাণপুর এলাকা থেকে সাদা পোশাধকারী সরকারি সংস্থার লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে ৫ বছর ৩ মাস পর্যন্ত অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রাখা হয়। গত ৫ আগস্ট দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন হলে ৭ আগস্ট ভোররাতের দিকে মাইকেল চাকমাকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।