হাসিনাসহ খুন-গুমে জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে- মাইকেল চাকমা

0

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০২৪

ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা অবিলম্বে হাসিনাসহ খুন-গুমে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট ২০২৪) সকালে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার ও নিখোঁজ হওয়াদের স্বজনরা এই সমাবেশ করেন। এতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি, ব্যানার-পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়ান স্বজনরা। তারা গুম হওয়া স্বজনদের সন্ধান দাবি করেন। অনেকে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গুম হওয়া ব্যক্তি যারা ফিরে এসেছেন তারা তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এসময় ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তারা। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, মানবাধিকার কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

মাইকেল চাকমা তার সংহতি বক্তব্যে প্রথমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করেন এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান।

তিনি বলেন, আমাকে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার কল্যাণপুর থেকে ৫/৭ জনের সাদা পোশাধারী একদল লোক জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তারা আমাকে ৫ বছর ৩ মাস ওই গোপন বন্দিশালায় আটক রেখে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সংগঠিত অভ্যূত্থানর পর আমাকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে আমার এলাকার কাছাকাছি একটি স্থানে রেখে আসে। ওখান থেকে আমি অনেক কষ্ট করে বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশে কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। এই সরকার তাদের অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ যেন কথা বলতে না পারে সেজন্য মানুষের গলাটিপে কণ্ঠস্বর রোধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এর মাধ্যমে সরকার জনগণকে এই বার্তা দিয়েছিল যে, তোমাদেরকে তুলে নিয়ে মাসের পর মাস গুম করে রাখতে পারি, খুন করে ফেলতে পারি। হাসিনা ক্ষমতা রক্ষার জন্য তার গুণ্ডাবাহিনী এবং ডিজিএফআইসহ দেশের গোযেন্দা বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করেছিল।  

মাইকেল চাকমা গুম-খুনে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, হাসিনাসহ তার নির্দেশে যে খুন-গুম হয়েছিল যারা এতে জড়িত ছিল তাদেরকে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে ন্যায়বিচার করতে হবে। এই ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তারা যে অন্যায়-অপরাধ করেছে তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে আমর মতো আর বাংলাদেশের কোন মানুষকে গুম হয়ে মাসের পর মাস মৃত্যুপুরীতে দিন কাটাতে না হয়।

তিনি গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আজকে যে শত শত পরিবারকে তাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আশায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তাদের এই কষ্ট আমি বুঝি। আমি জানি গুম হওয়ার পর ৫টি বছর কীভাবে কাটিয়েছি। আর এও জানি এই গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো কীভাবে দিন কাটাচ্ছে। আমার পরিবার কী পরিমাণ সাফার করেছে সে কষ্ট আমি বুঝি। আজকে এখানে অনেকের কান্না আমি শুনলাম, আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমিও কান্না করেছি।


তিনি সম্প্রতি গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, এই তদন্ত কমিশনকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। অতিসত্ত্বর যাদেরকে গুম করে রাখা হয়েছে, যাদেরকে পরিবার এখনো সন্ধান পায়নি তাদের বিষয়ে কমিশনকে জানাতে হবে। তাদেরকে যদি খুন করা হয় বা মেরে ফেলা হয় তাহলেও জানাতে হবে। আর যদি বেঁচেও থাকে দেশের কোন আয়নাঘরে তাদেরকে বন্দি করে রাখা হয়েছে কমিশনকে তদন্ত করে তা নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারকে জানাতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে অনেক আয়নাঘন আছে বলে শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আয়নাঘর সম্পর্কে আমি জানতাম না। সেখানে আমাদেরকে কোন ইনফরমেশন দেয়া হতো না। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতো। এখন সেখান থেকে বের হয়ে এসে জানতে পারছি আয়নাঘরের কথা। শুনতে পাচ্ছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়নাঘর আছে। এসব বন্দিশালা বন্ধ করতে হবে, ভেঙ্গে দিতে হবে। এই বন্দিশালায় কোন নাগরিককে বিনা বিচারে মাসের পর মাস আটকে রাখা যাবে না।

মাইকেল চাকমা বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য, ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মায়ের ডাক’র যে সংগ্রাম চলছে এই সংগ্রাম চলবে। দেশের সমগ্র মানুষকে, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতা সবাইকে এই সংগ্রামে সমর্থন জানাতে হবে।  তা না হলে আমাাদের এই দেশে খুন, গুম বন্ধ হবে না। আপাতত বন্ধ হলেও পরে যে হবে না এ কথা বলা যায় না। এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করতে না পারি, হাসিনাসহ যারা অপরাধ করেছে তাাদেরকে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে এই ব্যবস্থা চলতেই থাকবে।

তিনি মায়ের ডাক’র সংগ্রামে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সকলে মিলে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More