চবিতে সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা, মনিকা ও রূপনা চাকমাকে সংবর্ধনা

0

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: চবি প্রতিনিধি


চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

দ্বিতীয় বারের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২৪ জয়ী পাহাড়ের তিন কৃতি নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা ও মনিকা চাকমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর ২০২৪) বিকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অডিটোরিয়ামে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ধনকিশোর ত্রিপুরা এবং সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্য তিষ্য চাকমা ও ক্যরোলিনা চাকমা। 

মূল অনুষ্ঠানের আগে প্রথমে গেইটে ফুল দিয়ে তিন কৃতি ফুটবলারকে অভ্যর্ত্থনা জানানো হয়।

এরপর বিকাল ৩ ঘটিকায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতঃপর জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানে সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিররবতা পালন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রীড়াপ্রেমী ছাত্র-জনতাসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য  জনাব ড. কামাল উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসফাক উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা। এছাড়া এতে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা ও মনিকা চাকমাসহ অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে সাদরে বরণ করা হয়। এরপর জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে কৃতি ফুটবলারদের প্রথমে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে চবি’র উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসফাক উদ্দিন তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।


অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে মনিকা চাকমা বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত, গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সংবর্ধনা নিতে পারছি, এটাও আমাদের জন্য সৌভাগ্য। আমাদের জন্য সবাই আশীর্বাদ করবেন, সামনে যেন আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি।’

ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘আপনারে আমাদের এভাবে ভালোবেসে, সমর্থন দিয়ে পাশে থাকবেন। যেন আমরা ভবিষ্যতে এর থেকে বড় বড় বিজয় আপনাদের এবং বাংলাদেশকে উপহার দিতে পারি। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যেও যেন আমরা বড় টিম হিসেবে দাঁড়াতে পারি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কন্যাদের এই অবদান দেশের জন্য কূটনৈতিক অর্জন। এই স্বর্ণকন্যারা শুধু নিজেরাই জয়ী হয়নি, তারা আমাদের দেশকে জয়ী করেছে। তারা দেশকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আনতে পেরে অন্যতম সাহসের পরিচয় দিয়েছে।

বক্তব্য রাখছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন।


তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে যারা বিভিন্নভাবে রিপ্রেজেন্ট করছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার। ভৌগোলিকগতভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের যে অবস্থান তা তিন পার্বত্য অঞ্চলের সাথে এক সখ্যতা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দের্যের মধ্যে একটি হচ্ছে জুম্ম শিক্ষার্থীদের বিচরণ। তারা বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সকলের বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা জাতপাত ভুলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়বো। এটিই সবচে বড় প্রত্যাশা। যারা পাহাড়ে বাস করে তারা বাংলাদেশেন প্রাণ। কারণ, তারা পাহাড়ে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করে উচ্চ শিক্ষত হয়ে দেশের বিভিন্ন ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে হাডুডুকে জাতীয় খেলা করা হয়েছে, আসলে ফুটবলকেই জাতীয় খেলা ঘোষণ করা উচিত। ফুটবলে দীর্ঘ দিনের সংকট কাটিয়ে দেশের পতাকাকে এশিয়ার দরবারে উজ্জ্বল করেছে আমাদের এই স্বর্ণকন্যারা। আগামীতে তাদের দেখে আশা তৈরি হবে। তারা পাহাড়কে নয়, গোটা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা খবর কাগজের মধ্যে জেনেছি তাঁদের মধ্যে একজন ইউরোপে খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছে। আমরা চাই ইউরোপে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যেও মহিলা মেসি সৃষ্টি হোক, মহিলা রোনালদো সৃষ্টি হোক। আমরা সিআর সেভেনের জায়গায় সিআর রূপনাকে পাব। আমরা সেই প্রত্যাশা রাখি। আশা করি, এই বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে।’

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শিক্ষা, অর্থনীতি নানা দিক থেকে পিছিয়ে পড়া। আমরা যদি পর্যাপ্ত সুযোগ পাই, আমরা যদি বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ পাই তাহলে আমাদের পাহাড়ে, সমতলে সারা দেশে হাজারো রূপনা, ঋতুপর্ণা, মনিকাদের মতো তারকা তৈরি হবে।’

আলোচনা সভার পরে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙালি নৃত্যশিল্পীরা একটি যৌথ নৃত্য পরিবেশন করেন। স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে উক্ত পরিবেশনায় ফুটিয়ে তোলা হয় বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের সুর।

পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল আনন্দ, উচ্ছ্বাসে ভরপুর।

শেষে দর্শকদের বিনোদনের জন্য একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। ঋতুপর্ণা চাকমারাও ম্যাচটি উপভোগ করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More