লামায় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপির বিক্ষোভ

0

ভূমির সাথে জড়িয়ে আছে পাহাড়িদের অস্তিত্ব, তা কেউ কেড়ে নিতে চায় পাহাড়ি ছাত্রসমাজ তা বরদাস্ত করবে না: অমল ত্রিপুরা

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির সাথে জড়িয়ে আছে পাহাড়িদের অস্তিত্ব, এই ভূমি পাহাড়িদের প্রাণ। সুতরাং পাহাড়িদের কাছ থেকে কেউ ভূমি কেড়ে নিতে চাইলে, পাহাড়িদেরকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কেউ ষড়যন্ত্র করা হলে পাহাড়ি জনগণ তা মেনে নেবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজ তা বরদাস্ত করবো না, পাহাড়ে প্রত্যেকটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে হুশিয়ার করেছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

গত ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বান্দরবান জেলায় লামা সরইয়ে পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় দুর্বৃত্তদের কর্তৃক ত্রিপুরাদের ১৭টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)—এর উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকাল সাড়ে ৩ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

সমাবেশ বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহসাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা। এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক অরুপ দাশ শ্যাম।

সমাবেশে অমল ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, যুগ যুগ ধরে বান্দরবান জেলা তথা সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে নামে বেনামে বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি ও কোম্পানি নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের মহাৎসব চলছে। সেখানকার অধিবাসীদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য এবং পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করে অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার জন্য এই রাষ্ট্র তা পরিকল্পিতভাবে করাচ্ছে। লামা সরই ইউনিয়নে ১৭টি পরিবারে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও এর থেকে কোন বিচ্ছিন্ন নয়।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর আগে  চিম্বুক সহ বিভিন্ন এলাকায় ম্রো, ত্রিপুরা, মারমাদের ভূমি বেদখলের পায়তারা করেছে। এসব ঘটনায ভূমিদস্যুদের নামে মামলা দায়ের করা হলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যার ফলে একের পর এক ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটছে। আমরা লামায় ত্রিপুরাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের নেতা অরুপ দাশ শ্যাম

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টে অরুপ দাশ শ্যাম বলেন, বান্দরবানে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন যখন বড় দিনের উৎসব পালন করছে ঠিক সে সুযোগে দুর্বৃত্ত, ভূমি বেদখলকারীরা ১৭টি ত্রিপুরা বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জুলাই—আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলছি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, দ্রব্যমূল্য দাম কমাতে হবে, ন্যায় বিচার ও গণমাধ্যমে স্বাধীনতা চাই। তখন তথাকথিত বাঙালি বলে বলে একটা বিনোদন তৈরি করা হচ্ছে। সমতলে মানুষদের হয়তো বলতে হচ্ছে না যে আমরা আমার দেশে বসবাস করতে চাই। কিন্তু আমাদের পাহাড়ের বন্ধুদের বলতে হচ্ছে আমাদের বাসস্থানে আগুন লাগানো যাবে না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই।পাহাড়িরা এই দেশের নাগরিক হওয়ার পরেও বসবাসের অধিকারটুকু তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর মদদে যুক্ত হয়ে দুর্বৃত্তদের দিয়ে বাড়িঘরগুলোতে আক্রমণ করা হয়, বিভিন্ন অসহযোগীতা করা হয়। পাহাড়িদের যে শান্তিপূর্ণ বসবাস, সেটি অশান্তি করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে পাহাড়ে সেটলার বাঙালীদের দিয়ে কৃত্রিম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র পাহাড়—সমতলে বিভাজনের রাজনৈতিক তৈরি করে রেখেছে। তিনি রাষ্ট্র ও সরকারে যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন জনগণের শক্তির কাছে তারা দাঁড়াতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন। অবিলম্বে বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও লামা বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাহাড়—সমতলে প্রগতিশীল মানুষদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আহ্বান জানান।

সমাবেশে প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আমলে প্রেতাত্মরা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রয়েছে। ফলে পাহাড়ে পাহাড়ি জনগণের ওপর একের পর এক অন্যায় ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা, অবিলম্বে লামা পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় ত্রিপুরাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিসংযোগকারী দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধ এবং পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতি দাবি জানান।

সমাবেশের পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে সামনে গিয়ে শেষ হয়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More