খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের মাইসছড়ি অরণ্য কুটিরে বুদ্ধ আসন সংস্কারের কাজ সেনাবাহিনী বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, গতকাল ১৬ মে সোমবার সকাল ৮টার দিকে বিজিতলা আর্মি ক্যাম্প কমান্ডারের নেতৃত্বে ২ পিকআপ আর্মি গিয়ে কুটিরে বুদ্ধ আসন সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেয়। এ সময় কুটিরের বুদ্ধ আসন ও ফ্লোর সংস্কারের কাজ চলছিলো। সেনারা কর্মরত শ্রমিকদেরকেও কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেয়।
এরপর ক্যাম্প কমান্ডার মাইসছড়ি ইউনিয়নের প্রাক্তন মেম্বার বিমল চাকমাকে ক্যাম্পে ডেকে পাঠায়। এ সময় ক্যাম্প কমান্ডার তার সাথে হুমকি স্বরূপ কথাবার্তা বলেছেন বলে বিমল চাকমা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে ক্যাম্পে ডেকে ক্যাম্প কমান্ডার হুমকি দিয়ে বলেন যে, “পাহাড়ি-বাঙালি যেই হোক কেউ যদি তার কথা অবাধ্য করে তাহলে তিনি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।আমি ভালোর জন্য খুব ভালো আর মন্দের জন্য খুব খারাপ। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করবো। পাহাড়ি-বাঙালি যে কেউ উক্ত জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করলে প্রয়োজনে মেরে চামড়া ফাটিয়ে দিয়ে লবণ লাগিয়ে রোদে শুকাবো।”
বিমল চাকমা আরো বলেন, ক্যাম্প কমান্ডার জায়গাটি বিতর্কিত উল্লেখ করে আমাকে বলেছেন ‘যেহেতু তোমরা ইউএনও‘র কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছো সেহেতু সেটা আগে মীমাংসা হতে হবে। তার আগে কুটিরে কোন সংস্কার বা উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না। বর্তমানে কুটিরটি যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় থাকবে। আর কোন বাঙালি যদি উক্ত জায়গায় চারা রোপন করে ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায় তাহলেও দ্রুত তাকে খবর দিতে হবে।’
ক্যাম্প কমান্ডারের নির্দেশের ফলে বর্তমানে কুটিরে বুদ্ধ আসন সংস্কারের কাজ স্থগিত রাখতে হয়েছে বলে বিমল চাকমা জানান।
বিগত জরুরী অবস্থার সময়ও সেনারা বিমল চাকমাকে গ্রেফতার করে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠিয়েছিল। এ সময় তিনি সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন।
কুটিরটি যে জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে সে জায়গার মালিক হচ্ছেন মৃত কিনারাম চাকমার ছেলে হেমন্ত লাল চাকমা। সেখানে তার মোট ১০ একর জায়গা থেকে কুটির স্থাপনের জন্য ৫ একর জায়গা দান করেছিলেন। বিগত ২০০৬ সালে উক্ত জায়গার উপর কুটিরটি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে কুটিরে দু‘জন শ্রমণ অবস্থান করছেন।
সেটলার কর্তৃক জায়গা বেদখল বন্ধে প্রতিকার চেয়ে পাহাড়িরা মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও এখনো পর্যন্ত কোন সমাধান দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য যে, বিগত জরুরী অবস্থার সময় কুটিরের পার্শ্ববর্তী পাহাড়িদের জায়গার উপর সেনারা সেটলারদের বসিয়ে দেয় এবং তাদেরকে বাগান-বাগিচা করতে উত্সাহিত করে।এ সময় সেটলাররা পাহাড়িদের কয়েক ‘শ একর জায়গা বেদখল করে ফেলে। এসব জায়গায় পাহাড়িদের সৃজিত সেগুনসহ বিভিন্ন গাছের বাগান রয়েছে৷ সেটলারদের বেদখলে থাকায় এসব জায়গায় পাহাড়িরা কোন চাষাবাদ করতে পারছে না এবং সৃজিত বাগান থেকেও গাছ কাটতে পারছে না।