নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১০ দফা দাবিতে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল আহুত দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন, সভা-সমাবেশ ও মিছিলে বাধা প্রদান বন্ধ কর-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ১২ ডিসেম্বর ২০১০, সকাল ১১টায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর খাগড়াছড়ি অঞ্চলের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর খাগড়াছড়ি অঞ্চলের সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মিঠুন চাকমার সভাপতিত্বে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার মাঠে (ইউপিডএফ-এর অফিসের সামনে) অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রীনা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আপ্রুসি মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন্-রে খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি রিকু চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি রেমিন চাকমা ও পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি নিকোলাস চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রদেব চাকমা। সমাবেশে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১ হাজারের অধিক লোক অংশ নেন।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়ন তুলে ধরে বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাগুলোর উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চলে আসছে। সেনাশাসন অপারেশন উত্তরণ বলবত রেখে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণের মাধ্যমে নিপীড়ন জারি রাখা হয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ, উন্নয়ন, বিভিন্ন বাগান সৃজনের নামে ভূমি বেদখল করে পাহাড়িদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জনগণের ওপরও একইভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দিন বদলের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসে বিএনপি জোট সরকারের মতো শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে, ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে, রূপগঞ্জে গুলি চালিয়ে নিরীহ লোককে খুন করেছে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনেরও অধিক গণহত্যার আজো কোন বিচার করা হয়নি।
বক্তারা সভা-সমাবেশের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সভা সমাবেশ করার অধিকার একটি গণতান্ত্রিক অধিকার।। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জাতিগত ও শ্রেণীগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল কর্তৃক উত্থাপিত ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। এসব দাবিগুলো হলো : ১. অবিলম্বে সারাদেশে সভা-সমাবেশের ওপর পুলিশী হামলা বন্ধ ও সকল বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান বন্ধ করতে হবে।, ২. অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে অপারেশন উত্তরণ তুলে নিয়ে সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে, সৈন্য সমাবেশ ও ক্যান্টনমেন্ট সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস করতে হবে, ৩. ভূমির ওপর ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের জনগণের প্রথাগত অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে, ৪. প্রত্যেক জাতিসত্তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে, ৫. সংবিধানে সংখ্যালঘু সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে, ৬. প্রত্যেক ভাষাভাষীর নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ও ভাষা চর্চার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইকো পার্ক ও রিজার্ভ ফরেস্ট-এর নামে ভূমি থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, ৭. বান্দরবানের রুমায় ১০ হাজার একর জমি দখল করে সেনানিবাস বানানো চলবে না, ৮, কল্পনা অপহরণে এবং আলফ্রেড সরেন, পিরেন স্নাল ও চলেশ রিছিল এর হত্যার বিচার করতে হবে, ৯. ১৯-২০ ফেব্রুয়ারী ২০১০ বাঘাইছড়িতে ও ২৩ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি জনগণের ওপর হামলা, বাসগৃহে অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনার জন্য দায়ী সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি দিতে হবে, ১০. জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির সকল সরকারী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্বনির্ভর বাজার থেকে শুরু হয়ে শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর বাজারে এসে শেষ হয়।
রাঙামাটি : রাঙামাটির সাপছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সহস্রাধিক ব্যক্তি অংশ নেন। ইউপিডিএফ নেতা জ্ঞান বিকাশ চাকমা এতে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসীবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক কমিটির চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য সচিব মাইকেল চাকমা ও ইউপিডিএফ রাঙামাটি অঞ্চলের সংগঠক অলকেশ চাকমা।
অধ্যক্ষ হোসেন খান পাহাড়িদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা একা নন। সমতল অঞ্চলের মেহনতি মানুষ আপনাদের সাথে রয়েছে। তিনি বলেন সারা দেশ আজ ঘুষ ও লুটপাটের রাজত্বে বাস করছে। এ বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। প্রশাসন তথা সরকার সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখে কার্যক গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে