রামগড়ের হাফছড়িতে সেটলাররা পাহাড়িদের জমি বেদখল করছে

0
19

সিএইচটি নিউজ ডটকম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের দক্ষিণ হাফছড়িতে সেটলাররা সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাহাড়িদের জমি বেদখলে নেয়ার জন্য জঙ্গল পরিস্কার করছে, অন্যদিকে তার কিছু দূরে উত্তর হাফছড়িতে একইভাবে সেনা প্রহরায় সেটলার বাঙালিরা মসজিদ নির্মাণের জন্য থুইয়ো মারমার ২ একর জমি বেদখল করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

Land grabbingস্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, আজ বুধবার ৫ আগস্ট সকালে সেটলাররা সেনাবাহিনীর সহায়তায় দক্ষিণ হাফছড়িতে (বক্রিপাড়া নামেও পরিচিত) সাধন চাকমার ৬ একর জমির ঝোপঝাড় পরিস্কার করে। সেনাদের উপস্থিতির কারণে জমির মালিক ও এলাকাবাসী বাধা দেয়ার সাহস পাচ্ছে না।

সাধন চাকমার (বয়স ৩০ পিতা সুমতি চাকমা) জমির পাশে আরও তিন পাহাড়ির জমিও বেদখল করা হবে বলে সেনারা বলেছে। এদের নাম হলো বুদধন চাকমা, ৬০, তার জমির পরিমাণ ৩ একর; তার ছেলে মতিলাল চাকমা, ৩৫, তার জমির পরিমাণ ৩ একর ও মঙ্গল কুমার চাকমা (৪০) পিতা নাত্থো মনি চাকমা, তার জমির পরিমাণ ৩ একর।

এলাকাবাসীর সূত্রে আরো জানা যায়, গত ২ আগষ্ট মানিকছড়ি সাবজোন থেকে ১১ জনের একদল সেনা হাফছড়িতে বক্রিপাড়ায় অপারেশনে যায়। এলাকাটি মানিকছড়ি সদর থেকে আনুমানিক ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এবং দক্ষিণ হাফছড়ি নামেও পরিচিত। এই গ্রামে আনুমানিক ৭০ পরিবার পাহাড়ি বা জুম্ম বসবাস করেন। তাদের মধ্যে থেকে কেবল উপরোক্ত ৪ পরিবারকে উচ্ছেদ করে সেনারা বাঙালি বসতি স্থাপন করতে চাইছে।

অপারেশনের সময় সেনারা সাধন চাকমাকে বলে, “এই জমি বাঙালিদের। তাই তোমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।”

এলাকার লোকজন ৮০ দশকে ব্যাপক সেনা-সেটলার হামলার কারণে নিজ জমি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলে। পার্বত্য চুক্তি পর দেশে ফিরে এসে তারা নতুন করে জীবনযাত্রা শুরু করেন।

সাধন চাকমা এই প্রতিবেদকে বলেন, “ এখানে আমার ৬ একর জমি রয়েছে। এই জমিতে বাপদাদা চৌদ্দ পুরুষ ধরে বসবাস করে আসছি। আর সেটলাররা আর্মিদের পাহারায় এসে জঙ্গল পরিস্কার করছে, যেন এটা তাদের বাপদাদার সম্পত্তি। দেশে কি কোন আইন-কানুন নেই?”

অন্য এক গ্রামবাসী বলেন,“আর্মিরাই এখানে হর্তাকর্তা বিধাতা। তারা যা বলে তাই আইন। জমির মালিকানা কার তা নির্ধারণ করে থাকে আইন আদালত। যদি কোন বাঙালি মনে করে এই জমি তার তাহলে সে আদালতে যাক। এভাবে কেন তারা আমাদের জমি কেড়ে নেবে।”

এলাকাবাসীরা জানান, তারা কোনভাবেই এ অন্যায় ভূমি বেদখল মেনে নেবেন না।

জনৈক শিক্ষক বলেন, আর্মিরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। বাঙালিরা আর্মিদের ও প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া কোনদিন পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করার সাহস পায় না।”

জঙ্গলের ভিতরে মসজিদ নির্মাণ?
রামগড়ের উত্তর হাফছড়িতে সেটলাররা সেনাবাহিনীর পাহারায় থুইয়ো মারমার ২ একর জমি বেদখল করে জমি কাটছে। এর আশে পাশে বাঙালি বসতি না থাকলেও তারা সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, গত মাসের প্রথমদিকে সিন্দুকছড়ির জোন কমান্ডার উক্ত জমি বেদখল করা হবে বলে পাহাড়িদের বলেছিলেন।

বর্তমানে হাফছড়িতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.