খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। ‘উৎসবের জন্য চাই নিরাপদ পরিবেশ, জাতিসত্তা হিসেবে চাই সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ দাবি সম্বলিত শ্লোগান নিয়ে ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি (বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু) উৎসবের প্রথম দিন আজ ১২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) খাগড়াছড়িতে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা নিজ নিজ পোশাক পরে অংশগ্রহণ করেন।
খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুর বাজারে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হয়। পরে শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ মাঠে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা।
সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক রণিক ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব তৃপ্তিময় চাকমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, পৌরসভার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কিরণ মারমা ও সমাজসেবিকা যুগতারা দেওয়ান।
সভায় চঞ্চুমনি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিগুলোর সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে এই বৈসাবি উৎসব। এই উৎসবের মধ্যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি যুক্ত রয়েছে। কাজেই আমরা এই বৈসাবির ঐতিহ্যকে কিছুতেই ত্যাগ করতে পারবো না। তিনি প্রতি বছর যাতে নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে বৈসাবি উৎসব আয়োজন করা যায় সেজন্য প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কিরণ মারমা তার বক্তব্যে বলেন, বৈসাবি মানেই পার্বত্যবাসীদের জন্য মিলন মেলা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাসমূহের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় করার একটি উৎসব হচ্ছে এই বৈসাবি। আমাদের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিই হচ্ছে এই বৈসাবি উৎসব। এই উৎসব আমরা যাতে নিরাপদ পরিবেশে পালন করতে পারি তার জন্য সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিবছর আমরা নিরাপদে উৎসব পালন করতে চাই।
তিনি গত বছর বৈসাবি র্যালিতে হামলাকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির জন্য আপনি চুক্তি করেছেন। কিন্তু তারপরও আমরা নিরাপদে উৎসব পালন করতে পারি না কেন?
কিরণ মারমা বৈসাবি উৎসবের মাধ্যমে জাতিসত্তাসমূহের মধ্যে ঐক্য সংহতি জোরদার করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
যুগতারা দেওয়ান বলেন, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগুলোর মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। তাই নিজ নিজ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য লালন করে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে ঐতিহ্যবাহী গরিয়া নৃত্য ও সাঁওতাল নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
শোভাযাত্রার আগে সকাল সাড়ে ৬টায় চেঙ্গী নদীতে ফুল দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়। সন্ধ্যায় রয়েছে গ্রামে গ্রামে ফানুস উত্তোলন ।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।