
বিশেষ প্রতিবেদন, কক্সবাজার : প্রেসিডেন্ট চি জিন পিং রাষ্ট্রীয় সফর শেষে বাংলাদেশ ছেড়ে যাবার দু’দিনও গত হয় নি। গেল ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১টায় কক্সবাজারে চার চীনা নাগরিক পুলিশের হাতে চরমভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। কর্তব্যরত পুলিশের এসআই কার থামিয়ে চালকের কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়ে নেয়, তাতে কোন খুঁত না পেলে চীনা নাগরিকদের চাকমা মনে করে সিট বেল্ট না লাগানোর অজুহাতে প্রাইভেট কার থেকে নামিয়ে রীতিমত তাদের জিম্মি করে রাখে, একজনকে ধাক্কাও মারে, প্রাইভেট কারটি জব্দ করে মামলাও দেয়। হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েও তারা রেহাই পান নি। এমনকী অন্য টেক্সিতে করে কক্সবাজার শহরে ঢুকতে চাইলে তাতেও পুলিশ বাধা দিয়ে চীনা নাগরিকদের চরমভাবে অপমান করে।
চট্টগ্রামের সিইপিজেড (চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল)-এর সানসাইন গ্রুপের কর্মকর্তা চার চীনা নাগরিক প্রাইভেট কার যোগে বেড়াতে গেল কক্সবাজার লিঙ্করোড বাস স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে (সূত্র : কালেরকণ্ঠ ১৮ ও ১৯ অক্টোবর ২০১৬)।
কক্সাবাজার-চট্টগ্রাম ও টেকনাফ মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ অবাধে টোকেন বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। নির্ধারিত অঙ্কের টোকেন নিয়ে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চালাতে হয় এ সড়কে। রামু তুলাবাগান পুলিশ ফাঁড়িটি কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের অধীন। আর চীনা নাগরিকগণ চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেয়ায় স্বাভাবিকভাবে তাদের টোকেন ছিল না, তাদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা না পাবার কারণে পুলিশ ছিল সুযোগের অপেক্ষায়। সিট বেল্ট না বাঁধার উছিলায় কর্তব্যরত পুলিশের এসআই চাকমা ভেবে প্রথম চোটেই চীনা নাগরিকদের কার থেকে নামিয়ে হেনস্থা করে।
এতে একদিকে যেমন কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে পুলিশের টোকেন বাণিজ্য ফাঁস হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে তার সাথে খুলে পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জাতিগত বিদ্বেষের রূপ। শুধু কক্সবাজারে বা পুলিশের হাতে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত এ ধরনের জাতিবিদ্বেষী নিন্দনীয় ঘটনা ঘটে চলেছে। বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মত সংস্থায় জাতিগত বিদ্বেষ অত্যন্ত প্রবল। এমন তথ্যও রয়েছে যে, জাতিগত বিদ্বেষ ও আক্রোশের শিকার হয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ ক’জন জওয়ান জাতিসংঘ মিশন থেকে বাদ পড়েছেন।
সর্বশেষ খবরে রামু তুলাবাগান ফাঁড়ির পুলিশের এসএই’কে প্রত্যাহারের সংবাদ জানা গেছে। কিন্তু এ ধরনের অপরাধে শুধু পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার যথেষ্ট নয়, উক্ত এসএই-এর বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষের অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। লাঞ্ছিত চীনা নাগরিকদের নিকট পুলিশের আইজি’র আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত। শুধু তাই যথেষ্ট নয়, নিজ সংস্থায় জাতিগত বিদ্বেষ লালনের কারণে চাকমাসহ অন্যান্য জাতিসত্তার জনগণের নিকটও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে বিবৃতির মাধ্যমে আইজি’র দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।