লিখেছেন: নাট্যকার ও কবি হাসান ফকরি
২৪তারিখ রাতের বাসে চড়ে পরদিন সকালে গিয়ে নামলাম মানিকছড়ি। সেখান থেকে যাবো নান্যার চর। কথা বলবো নিহত রমেলের কলেজের প্রিন্সিপাল ও সহপাঠীদের সাথে। কথা বলবো জনপ্রতিনিধি, থানার ওসির সাথে। শেষে যাবো বুড়িঘাটের পূর্ব হাতিমারায় রমেলের শোকাহত বাবা মার সাথে দেখা করে রাঙামাটি ডিসি অবিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে।
মানিকছড়ি থেকে সামান্য যেতেই কুতুবছড়ি আর্মি ক্যাম্পে জোর বাধা। কৌশলে পার পেলাম। তারপর একের পর এক বাধা এলো গিলছড়ি, সমাজকল্যাণ, বগাছড়ি, মাস্টারবাড়ি ক্যাম্প থেকে। সব ডিঙানোর পর মৌচাকের বল্লার মতো ধরলো নান্যারচর আর্মি জোনের সদস্যরা। আমাদের অপ্রতিরোধ্য অবস্থা দেখে উপস্থিত হলেন জোন কমান্ডার মেজর সাহেব। সাত পাচ বুঝিয়ে ফিরাতে না পেরে আমাদের নিয়ে গিয়ে বসালেন তাদের ভেতরের গোলঘরে। তিনি একবার ঘরে একবার বাইরে ওয়াকিটকি হাতে কথা বলতে থাকলেন। যখন দেখলেন আমারা আমাদের লক্ষে অনড় তখন তিনি নতুন চাল চাললেন । হঠাৎ হৈ চৈ করে সিপাহীদের নির্দেশ দিতে লাগলেন প্রস্তুত হতে। শুরু হয়ে গেলো লেফটরাইট। বেজে ওঠলো পাগলা ঘন্টা। একজন এসে বলে গেলেন আমরা যেদিকে যাবো ওখানে সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়েছে আর্মি জোন আক্রমণ করতে। যুদ্ধ যুদ্ধ রব। আমরা নিশ্চিন্ত মনে ওসব দেখে মজা করছিলাম। মেজর সাহেব একসময় দৌঁড়ে এসে বললেন – পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমি নিজে আরও ফোর্স নিয়ে আপনাদের নিরাপদে এখান থেকে সরিয়ে নিতে এসেছি।” এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন আমাদের কোন কথা বলার সুযোগও দিলেন না। সশস্ত্র পাহারায় আমাদের নিয়ে চললেন মানিকছড়ি। ওখানকার আর্মিদের নির্দেশ দিয়ে গেলেন কোনভাবে যেন আমরা রাঙামাটি যেতে না পারি।আমাদের গাড়ি জোর করে ঘুরিয়ে দিলেন চট্টগ্রামের দিকে।
রাতে হোটেলে বসে সহযোদ্ধা বন্ধুদের সান্ত্বনা দিয়ে বললাম-” তোমাদের মতো ভাগ্য ক’জনের হয়? ক’ জন পারে এতবড় ওপেন ক্যানভাসে এত চমৎকার নাটক উপভোগ করতে?”
বুঝুন এবার বন্ধুগণ, আমাদের মত সাংস্কৃতিক কর্মীদের চোখের সামনে যারা এমন মিথ্যা নাটক সাজাতে দক্ষ ; গরীব পিতামাতার কলেজ পড়ুয়া সন্তান রমেলকে নির্যাতন করে মেরে তার মরদেহ পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে তা ঢাকতে নতুন বক্তব্য সম্বলিত নাটক বানাতে কি খুব একটা বেগ পাওয়া লাগে??
__________