খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির কমলছড়ি ইউনিয়নের ভুয়াছড়ি গ্রামের সেটলার আয়নাল। পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে গাছ কিনে বাজারে এনে বিক্রি করা তার পেশা। গত সোমবার(১৯ জুন, ২০১৭) খাগড়াছড়ি সদরের পূর্বদিকের গ্রাম গুয়ামাহাটে সে গিয়েছিল গাছ কিনতে। গাছও সে কিনেছিল। সাথে ছিল তার এক লেবার/শ্রমিক বন্ধু। গাছ কিনে তারা দুইজন সকাল ১০ টার দিকে ছড়া পানিতে সেই গাছগুলো ভাসিয়ে নিয়ে আসছিল। গুয়ামহাট হয়ে খালপার এলাকা পর্যন্ত গাছগুলো ভাসিয়ে নিয়ে এনে আপার পেরাছড়া বা তেঁতুলতলায় গাছগুলো বিক্রি করার কথা তাদের। কিন্তু সেদিন সারাদিন খাগড়াছড়িতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পানি ভয়ংকরভাবে বেড়ে যায়। পানির অস্বাভাবিক স্রোতে আয়নাল ও তার শ্রমিক বন্ধু প্রাণপণ চেষ্টা করে গাছগুলো রক্ষা করতে। এক পর্যায়ে পানির তোড়ে আয়নালের শ্রমিক বন্ধুটি ভেসে যায়। আয়নাল কূলে উঠতে সক্ষম হয়।
কিন্তু আয়নাল কূলে এসে তার শ্রমিক বন্ধুকে না খুঁজে ভুয়াছড়ি গ্রামে চলে যায়। সেখানে গ্রামে রটিয়ে দেয় যে, তার শ্রমিক বন্ধুকে পাহাড়িরা অপহরণ করেছে। সেনাবাহিনীকেও সে একথা জানায়। এতে সেনাবাহিনী গুয়ামাহাট গ্রামের আশেপাশের বিভিন্ন পাহাড়ি বাড়িতে শ্রমিক বা লেবার অপহরণের তথ্য বিষয়ে খোঁজ করতে থাকে। আয়নালের এই কথায় ভুয়াছড়ি গুচ্ছগ্রামের সেটলার লোকজন উত্তেজিত হয়ে একত্র হতে থাকে। যতই বিকাল হতে থাকে ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। ভুয়াছড়ির পাশের পাহাড়ি গ্রামে এতে আতংক ও উত্তপ্ত পরিস্থতির সৃষ্টি হয়।
বিকাল তিনটার দিকে পাহাড়ি গ্রামের জনগণ জানতে পারে যে, আয়নালের উক্ত লেবার বন্ধুটি পাহাড়ি পানির স্রোতের তোড়ে ভাসতে ভাসতে কোনোমতে এক জায়গায় কূলে ভিড়তে সক্ষম হয় এবং এক পাহাড়ির বাড়িতে মুমূর্ষু অবস্থায় আশ্রয় নেয়। সেখানে পাহাড়ি উক্ত পরিবার তাকে শুশ্রূষা করে এবং তাকে ভুয়াছড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে।
এই খবরটি জানাজানি হবার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।
তবে এই ঘটনায় এলাকার পাহাড়ি গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই বিভিন্ন এলাকায় ‘সেটলার অপহরণ করে মেরে ফেলা’ র অভিযোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়িদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে থাকে, তার উপর আয়নালের এই নাটকবাজিতে পাহাড়ি জনগণ অতীষ্ট হয়ে সেনাবাহিনীর উক্ত দলটিকে সোজাসাপ্টা বলে দেয়-যদি এরকম নাটক সাজানোর পরে পাহাড়িদের গ্রামে হয়রানী চালানো হয় তবে পাহাড়ি গ্রামে যে সেটলার বাঙালী ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ঢোকে তাদেরকে গ্রামে ঢুকতে মানা করে দেয়া হবে।
তাছাড়া আয়নালের লেবার বন্ধুটি যদি সত্যিই পাহাড়ি স্রোতের তোড়ে মারা যেত তবে খাগড়াছড়িতে ‘পাহাড়িরা একজন সেটলারকে অপহরণ করে হত্যা করেছে’ গল্প সাজিয়ে নিরীহ পাহাড়িকে আটক করা হতো এবং একইসাথে সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে লংগদু ঘটনার মতো দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা যে হতো না তাও বলা যেত না।
ভাগ্যিস আয়নালের লেবার বন্ধুটি বেঁচে ফিরেছে।
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।