নান্যাচর : রাঙামাটির নান্যাচরে গতকাল মঙ্গলবার সেনা সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনীর (স্থানীয় ভাষায় দেরোতপুজ্যা, জারগো) সর্দার তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মিটিঙের নামে ডেকে চরমভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করার পর অস্ত্রের মুখে মিছিলে নামতে বাধ্য করেছে। এ সময় নান্যাচর জোনের সেনারা তাকে সহযোগিতা দেয়।
তথাকথিত মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য হওয়া কয়েকজন মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল দুপুর ২টার দিকে দক্ষিণ ফিরিঙ্গি পাড়ার বিঝু রামের বাড়িতে সশস্ত্র অবস্থায় হাতে লাঠি ও রশি নিয়ে হাজির হয় মুখোশ বাহিনীর সর্দার দেরোতপুজ্যা বর্মা। সে মিটিঙ এর নামে জনপ্রতিধনিধিদের ডাকলেও শুরু থেকে তাদের গালাগালি শুরু করে। জনপ্রতিনিধিদের কাউকে সে একটি কথাও বলার সুযোগ দেয়নি।
উপস্থিত জনপ্রতিনিধিদেরকে দেরোতপুজ্যা বর্মা হতাশার সুরে বলে, ‘আমি তো এমনিতে মরে গেছি। কয়দিন আর বাঁচবো। মৃত্যুর আগে খেলা দেখিয়ে যাবো। অর্থাৎ সে মরার আগ পর্যন্ত জাতির অনিষ্ট করে যাবে।’
কয়েকদিন আগে নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি ও নান্যাচরের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জারগো দলের খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরারবর দেয়া স্মারকলিপি প্রসঙ্গ তুলে সে তা সংবাদ সম্মেলন করে প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেয়। অন্যথায় তাদের প্রত্যেককে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এক লক্ষ টাকা করে দিতে হবে অথবা একশ বেত (মুগর) খেতে হবে বলে সে হুমকি দেয়।
এ সময় রশি এবং লাঠি হাতে সশস্ত্র মুখোশরা তার আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
এরপর বর্মা তাদের হাতে একটা ব্যানার ধরিয়ে দিয়ে নান্যাচর সদরে মিছিল করতে বাধ্য করে। তখন প্রায় বিকাল ৫টা বাজে। মিছিলের আগে উজ্জ্বল কান্তি চাকমা দাজ্যা নামে অন্য এক মুখোশ সদস্য অস্ত্র উঁচিয়ে সবাইকে টিএন্ডটি বাজারের দিকে তাড়িযে নিয়ে যায়।
মুখোশদের অস্ত্র হাতে টিএন্ডটি বাজারে যেতে দেখে এক ব্যক্তি দাজ্যাকে বলেন ‘আপনাদের অস্ত্র নিয়ে বাজারের দিকে যাওয়া ঠিক হবে না, কারণ সেখানে আর্মিরা রয়েছে।’
এ কথা শুনে দেরোতপুজ্যা দাজ্যা বলে, ‘আমাদের কিছু হবে না, আর্মিদের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে’। এরপর সে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দোকানদারসহ সবাইকে মিছিলে যেতে বাধ্য করে।
বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে টিএন্ডটি বাজার থেকে তথাকথিত মিছিল শুরু হয়। সাথে মুখোশ বাহিনীর সদস্য রিপন চাকমা, ঝিমিত চাকমা ও ইন্টন চাকমা (সুরেন) ছিল। মিছিলটি নান্যাচর জোন গেইটে গেলে কার মিছিল জানতে চায় সেনারা। উপস্থিত মুখোশ সদস্যরা তপন জ্যোতি চাকমার কথা বললে দেরী না করে যেতে দেয়। অথচ এর আগে কোন মিছিল সে দিকে সেনারা যেতে দিত না।
মিছিলের সময় সেনারা জারগো দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কয়েক গজ দূরে টিএন্ডটি বাজারে স’ মিলে অবস্থান করে তাদের নিরাপত্তা বিধান করে।
স্থানীয় কয়েকজন জুম্ম নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘নান্যাচরের মানুষ অতীতে এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি। সন্ধ্যার সময় জোনের ভেতর দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, রোগী নিয়ে যেতেও দশবার কৈফিয়ত দিতে হয়। কিন্তু আজ বিনা বাধায় মুখোশদের মিছিলটা যেতে দিলো। যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্টভাবে মুখোশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্কের গভীরতা কতদূর তা জনগণের সামনে দিবালোকের মতো পরিস্কার হচ্ছে।’
তারা জনপ্রতিনিধিদের সাথে বর্মার চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ ও তথাকথিত মিছিলকে রঙ্গ-তামাশা হিসেবে উল্লেখ করেন যা উপস্থিত লোকজন বেশ উপভোগ করেছে।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।