রাঙামাটি : চাকমা রাণী য়েন য়েন এর ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের যথোপযুক্ত বিচারের দাবিতে আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাঙামাটির রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হেডম্যান, কার্বারী, জনপ্রতিনিধিসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে দলে দলে অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশটি দুপুর ১টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
সকাল ১০টার সময় ইউপিডিএফ, পিসিপি, ডিওয়াইএফ, নারী সংঘ ও এইচডব্লিউএফের শতাধিক নেতাকর্মী রাণীকে শারীরিকভাবে অপদস্তের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ সম্বলিত ব্যানার নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়।
সমাবেশে রাঙামাটি সদর, বাঘাইছড়ি, সাজেক, নান্যাচর, কাউখালী, লংগদু, দীঘিনালা, মা’লছড়ি, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি, কুদুকছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১০৫ নং জীবতলী(রাঙামাটি সদর) মৌজার হেডম্যান হিটলার দেওয়ানের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক গৌতম দেওয়ান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী, নারী নেত্রী টুকু তালুকদার, বোমাং সার্কেলের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। এসময় চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার সহধর্মিনী রাণী য়েন য়েন উপস্থিত ছিলেন।
সংহতি সমাবেশে বক্তারা রাণী য়েন য়েন এর উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, চাকমা সার্কেল পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। চাকমা রাজা ও রাণী সবার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তাদের ওপর আঘাত আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ও জাতির ওপর আঘাতের শামিল। সমাবেশ থেকে বক্তারা যারা চাকমা রাণীকে লাঞ্ছিত ও দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে তাদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে চাকমা রাণী য়েন য়েন বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুই আদিবাসী বোনের উপর যে অত্যাচার হয়েছে, যে নির্যাতন হয়েছে তার বিচার চেয়েছি। আমরা কোনপ্রকার আইন লঙ্ঘন না করে, আইন মেনেই তার প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু তারা যখন দেখলো যে, আমাদের সাথে, আমাদের মনোবলের সাথে, আমাদের কৌশল-বুদ্ধিতে পেরে উঠছেনা তখন তারা অন্যায়ভাবে এ কাজটি করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মার খেয়েছি বা আমার ভলান্টিয়াররা মার খেয়েছে বলে তারা ভেবেছিল আমাদের লড়াই থেমে যাবে। এত সহজে আমাদের লড়াই থামবে না। আমাদের যে মনোবল ছিল গত ১৫ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার পর আমাদের মনোবল আরও বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, আমরা যেভাবেই হোক এর বিচার চাইবো। এ বিচার আমরা আদায় করবোই। ন্যায় প্রতিষ্ঠা আমাদের করতেই হবে।
চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘আমাদের সবাইকে তারা মেরে ফেলতে পারবে না। আমাকে মেরে ফেললেও, রাণীকে মেরে ফেললেও কিংবা আমার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেললেও তারা আমাদের জাতিকে মেরে ফেলতে পারবে না’। আমরা ‘মরা গরু বাঘ’ ভয় পাই না বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে থাকে এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের জুম্মদের, আমাদের পাহাড়িদের পরাজিত করবে ও ভীত করবে তারা ভুল মনে করছে। এ সময় তিনি ‘আমরা ভয় পাই না, আপনারাও ভয় পাবেন না’ বলে সমবেত জনতাকে অভয় দেন এবং বলেন, যতই আমাদের উপর আঘাত আসবে ততই আমরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হবো। এ সময় তিনি জুম্মদের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমি সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। কেয়ারটেকার সরকারে যোগ দিয়েছিলাম এই কারণে যে, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মানবাধিকার রক্ষিত হয়। আমরা বন্ধুহীন নই। দেশে-বিদেশে গণতন্ত্রমনা মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি বিলাইছড়িতে দুই বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটনায় আমরা চুপ থাকতে পারি না।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওরাছড়ি গ্রামে স্থানীয় ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযানের সময় একটি মারমা পরিবারের বড় বোন (১৯) ধর্ষণ ও ছোট বোন (১৩) যৌন নিপীড়নের শিকার হন। নির্যাতনের শিকার দুই বোনকে ২৩ জানুয়ারি রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই দুই মারমা বোনকে আদালতের নির্দেশের কথা বলে সেনা-পুলিশ-গোয়েন্দারা রাণী য়েন য়েন ও ভলান্টিয়ারদের উপর হামলা ও শারীরিক লাঞ্ছিত করে জোরপূর্বক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তাদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
———————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্রউল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।