খাগড়াছড়িতে সংসদ নির্বাচনে হাতি মার্কা বিজয়ী হয়ে আসতে পারে!

77
9

জাতীয়ভাবে বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দল-সংগঠন-পার্টি এবারের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। এর ফলে দেশের অন্য জেলায় নির্বাচনী আমেজ তেমন নেই বললেই চলে।

ফাঁকা মাঠে গোলের পর গোল দিতে হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগসহ খুচরা দলসমূহও নির্বাচনের পালে হাওয়া দিতে তেমন জোশ পাচ্ছে না।

10th parlament electionকিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম অবস্থা বললে অতি কিছু বলা হয় না। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এ অঞ্চলে নির্বাচনী আমেজ বেশ জমজমাট অবস্থায় রয়েছে।

বিশেষ করে খাগড়াছড়িতে রাজনৈতিক দিক থেকে ও জনসমর্থনের দিক থেকে শক্তিশালী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) ও জনসংহতি সমিতি(এম এন লারমা) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পাহাড়ি ভোটারদের মধ্যে এই নির্বাচনকে নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।

তীব্র ঠান্ডা ও শৈত্য প্রবাহের প্রাকৃতিক বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিদিন নির্বাচনী প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ইউপিডিএফএর প্রার্থী প্রসিত বিকাশ খীসার হাতি মার্কার পক্ষে বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে প্রতিদিন চলছে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন, হাতি মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ঘরোয়া বৈঠক-সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রচারণার দিকে খেয়াল রেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ইউপিডিএফ প্রার্থীর সাথে অন্য প্রার্থীদের।

অভিজ্ঞ মহল এরই মধ্যে ছক কষছেন কে জিতবে বা কী কারণে জিতবে তা নিয়ে। হাতি মার্কার দিকেই বেশি পয়েন্ট দিচ্ছেন তারা। তাদের মতে, এবারে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না।বিএনপির ভোট ব্যাংক মূলত বাঙালি ভোটার নির্ভর। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক দাঙ্গা-বিবাদের কারণে বিএনপি-কে আওয়ামীলীগ যেভাবে কোণঠাসা করে রেখেছে, এবং যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে তার প্রভাব পার্বত্য চট্টগ্রামেও পড়েছে। এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালি বিবাদকে উস্কে দিয়ে সহজেই বাঙালি বা পাহাড়িদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারতো এক শ্রেনীর সুবিধাবাদী সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চক্র। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ তারা পাচ্ছে না। এ অঞ্চলে বিএনপি আওয়ামীলীগের মধ্যে বিবাদ এখন যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে তা পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিবাদ-দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের চেয়ে বেশি বই কম বলে মনে হচ্ছে না।

আর নির্বাচনকালীন সর্বদল নামধারী আওয়ামী সরকার যেভাবে বিএনপি ও তার সমর্থিত বিরোধী দলের উপর হামলে পড়েছে এবং তার বিপরীতে বিএনপি কোনো পাল্টা গণতান্ত্রিক লড়াই সংঘটিত করতে না পারায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে তাদের সমর্থকদের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা যেকোনোভাবেই হোক সর্বদল নামধারী আওয়ামী সরকারকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে চাচ্ছে। তাই মনে করা যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের এতদিনের পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব সংঘাতের মনস্তাস্ত্বিক দ্বন্দ্বকে তারা তেমন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করে বরং সর্বদল নামধারী নির্বাচনকালীন আওয়ামী সরকারকে তারা এক হাত দেখিয়ে দিতেই বেশি উৎসাহিত হবে। বিএনপি ও তার সমর্থকগণ এ বিষয়েও অবহিত যে, তারা ভোট যতই বর্জন করুন না কেন, পার্বত্য অঞ্চলে যে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং হয়ে থাকে তাতে তারা ভোট না দিলেও যে কোনো ভাবেই হোক না কেন তাদরে ভোট কাস্ট হয়ে যাবে অর্থাৎ তাদের ভোট অন্য কেউ তাদের নামে দিয়ে দেবে। এবং তা সরকারদলীয় প্রতীকেই বেশি পড়বে। সুতরাং, দেশের অন্য স্থানে বিএনপি ভোট বর্জন এবং প্রতিরোধ করলেও ধারণা করা যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা “নৌকা ঠেকাও” ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট থাকবে। এবং একমাত্র হাতি মার্কাকে ভোট দিয়েই তারা তা করতে পারবে। সোলাইমান আলমশেঠ জাতিগত দিক থেকে একজন বাঙালি হলেও তারা তাকে ভোট দেবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ, সোলাইমান আলম শেঠ একজন উড়ে এসে জুড়ে বসা সুযোগসন্ধানী পরিযায়ী পাখী

অন্যদকে আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংকের দিকে খেয়াল রাখলে দেখা যায়, অর্থ লূটপাট, টেন্ডারবাজি, নেতাকে তেল মালিশ করা ইত্যাদিতে যে আওয়ামী নেতা বা কর্মী বেশি সুবিধা করতে পারেনি তারা আওয়ামীলীগের ৫ বছরের পুরো শাসনেই থেকে গেছে বঞ্চিত-সুবিধাবিহীনভাবে। ঘাঘু নামে চিহ্নিত কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা গত ৫ বছরে সরকারের লুটপাটকান্ডের সকল ক্ষেত্রে ভাগ বসাতে পেরেছে। এবং এতে অনেকের কাছে তিনি অর্থ-সুবধিা-টেন্ডার-ক্ষমতা-প্রতিপত্তির যোগানদাতা হিসেবে বিবেচিত হলেও বাদবাকি বিরাট একটি অংশ কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত থাকার কারণে তার প্রতি ক্ষুব্ধই হয়ে আছে। এবং আওয়ামীলীড়ের এই অংশটি কুজেন্দ্র লালকে ভোট দেবে না বলেই মনে হচ্ছে। কুজেন্দ্র লালের ক্ষমতা আরো বাড়ুক তা তারা চাইবে না। এই অংশটি শেষ পর্যন্ত যোগ্য এবং অনেক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী প্রসিত বিকাশ খীসাকেই বেশি প্রাধান্য দেবে বলেই ধারণা করা যায়। সুতরাং, এই অংশটি হাতি মার্কায় ভোট দিতে পারে।

এছাড়া ইউপিডিএফএর রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। গত নির্বাচনে ইউপিডিএফ পেয়েছিলো ৬০ হাজারের অধিক ভোট। এবারেও এই ভোটগুলো হাতি মার্কার পক্ষেই থাকবে।

এসকল বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে বলা যায় ইউপিডিএফএর প্রার্থী প্রসিত বিকাশ খীসা আগামী নির্বাচনে হয়তো বিজয়ী হয়ে আসতেও পারেন!

কিন্তু তারপরও কথা থাকে!

কারণ, জনতার মন বলে কথা! এবং জনগণের এই “মন”এর কথা আমরা জানতে পারবো আগামী ৫ জানৃয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ততদিন পর্যন্ত আমরা আশা করে যেতে পারি, আমরা খাগড়াছড়ি এলাকার জনগণ একজন যোগ্য ব্যক্তিকে সংসদে পাঠাতে পারবো যিনি নিঃস্বার্থভাবে জনগণের কথা বলবেন, অধিকার আদায়ের জন্য যিনি কাজ করবেন আত্ম প্রতিষ্ঠালাভের দিকে চিন্তা ভাবনা না করেন।

সূত্র: সিএইচটি২৪.কম

 

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.