পানছড়িতে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ!

0
345

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি স্কুল ছাত্রীকে তুলে নিয়ে দুই দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিলম্বে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার দুপুরে। তবে মেয়েটি ও তার পরিবার দুর্বৃত্তদের হুমকির ভয়ে ঘটনাটি প্রকাশ না করায় এতদিন তা জানাজানি হয়নি। আজই ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। মেয়েটিকে পাচার করার উদ্দেশ্যে তুলে নেয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ওই ছাত্রী বাড়ির পার্শ্ববর্তী মালটা বাগানে গেলে এ সময় দু’জন পাহাড়ি ছেলে-মেয়ের (ছেলেটি ত্রিপুরা ও মেয়েটি চাকমা)  সাথে তার সাক্ষাত হয়। ওই দুইজন পাহাড়ি ছেলে-মেয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে নাকে-মুখে চেতনানাশক স্প্রে করে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে রাঙাপানিছড়া দোকান এলাকা থেকে মোটর সাইকেলে তুলে পানছড়ি বাজারের তালুকদার পাড়া এলাকায় এক বড়ুয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে জুনি বড়ুয়া (মোটর সাইকেল ব্যবসায়ী) ও কাজল বড়ুয়া (স্থানীয়  দোকানদার)-এর হাতে তারা মেয়েটিকে তুলে দেয়। জুনি ও কাজল বড়ুয়া ওই বাড়িতে মেয়েটিকে দরজা-জানালা বন্ধ করে আটকিয়ে রাখে।

পরে ঐদিন বিকাল আনুমানিক ৫টার সময় জুনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া মেয়েটিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পানছড়ি উপজেলা সদরের কলাবাগানের পাশে মোমিন সাহেবের স’মিলের পিছনে একটি খোলা জায়গায় নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বকভাবে মেয়েটির চুল ছোট করে (ছেলেদের মতো) কেটে দেয়। এরপর সন্ধ্যায় মেয়েটিকে আবার ওই বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে রাতে তারা বাজার থেকে জুতা একজোড়া, গেঞ্জি ১টি ও শার্ট ১টি কিনে নিয়ে এসে মেয়েটিকে পরতে বলে এবং চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা কারোর সাথে মোবাইলে তাকে ঢাকায় নেয়ার কথা বলছিল বলে জানায় মেয়েটি। পরে নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে রাতে জুনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

এর পরের দিন (শনিবার) সন্ধ্যার সময়ে জুনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া মেয়েটিকে মোটর সাইকেলে করে উল্টাছড়িতে একটি খালি গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে মো. সাকিব ও তার এক সহযোগীর (নাম জানা যায়নি) হাতে তুলে দেয়। এরপর সেখানে সাকিব ও তার সহেযাগী মিলে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করার পর বাসায় নিয়ে গিয়ে রাত্রি যাপন করে।

চেতনানাশক প্রয়োগ ও উপর্যুপুরি ধর্ষণের ফলে মেয়েটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার সকাল ৮/৯টার দিকে ধর্ষক মো. সাকিব মেয়েটিকে উল্টাছড়ি হতে পানছড়ি বাজারে নিয়ে এসে একটি কসমেটিক দোকানে ফেলে রেখে গিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে। পরে ভিকটিম সেখান থেকে কোন রকমে মুক্তা লাইব্রেরীতে চলে আসে।

এদিকে, পরিবারের লোকজন হন্য হয়ে মেয়েটিকে খোঁজাখুজি করলেও বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়নি বলে জানা গেছে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে তার (মেয়েটির) দাদু মুক্তা লাইব্রেরিতে মেয়েটিকে দেখতে পায়। সেখানে মেয়েটির সাথে তার দাদু বলতে চাইলে সে পাগলের মতো আবোল-তাবোল বকতে থাকে, তার দাদু ও আত্মীয় স্বজনকেও চিনতে পারছিল না।

মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে পরে আত্মীয়-স্বজনরা মেয়েটিকে সরাসরি খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। সেখান ৪দিন চিকিৎসা করার পর মেয়েটি কিছুটা সুস্থ হলে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

ভুক্তভোগী মেয়েটির পরিবারের লোকজন জানান, তারা ধর্ষণকারীদের হুমকির কারণে মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে থানায় মামলা করেননি এবং এতদিন ঘটনাটিও প্রকাশ করেননি। তবে পরস্পরের মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়।

জানা গেছে, উক্ত ঘটনার কয়েকদিন আগে ভিকটিম ওই ছাত্রীকে জুনি বড়ুয়া টাকার প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। মেয়েটি তার প্রস্তাবে সাড়া না দিলে জুনি বড়ুয়া তাকে “অন্য একজন পাাহড়ি মেয়ে ঠিক করে দেয়ার’ প্রস্তাব দেয়। মো. সাকিবও একইভাবে মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং তার সাথে প্রেম করলে ৭ হাজার টাকা দেয়ারও প্রলোভন দেখায় বলে জানা যায়। কিন্তু উভয়ের প্রস্তাবে মেয়েটি সাড়া না দেয়ায় তাকে ভিন্ন কৌশলে তুলে নিয়ে তারা এই লোমহর্ষক ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়্ এলাকাবাসী এই ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত চিহ্নিত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.