প্রহ্লাদ চাকমা

গত ৯ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড সি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির ৭ম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সরকারের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষকারী ও বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। এতে কমিটির সদস্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা, পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদূর, রাঙামাটির এমপি দীপংকর তালুকদার, খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মহিলা এমপি বাসন্তি চাকমাসহ অন্যান্য সদস্য ও আমন্ত্রিত ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিস্তারিত জানা না গেলেও বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। সন্তু লারমার কথায়ও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি তো সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি “আপেক্ষিক অর্থে ভালো’ বলেই মন্তব্য করেছেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ “বৈঠক সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে, যেসব বিষয় আমাদের এখনো অমিমাংসিত আছে সেগুলো খুব অগ্রগতি হচ্ছে’ জানানো ছাড়া আর কোন কথাই বলেননি।
অপরদিকে সন্তু লারমা বলেছেন, ‘আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির ৭ম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, এটি ঢাকার বাইরে ১ম বৈঠক। পাশাপাশি আমরা সাগর কন্যা কুয়াকাটার নৈসর্গিক দৃশ্যও উপভোগ করছি’।
তিনি বলেন, “পার্বত্য চুক্তির বেশ কিছু বিষয় বাস্তবায়ন হয়েছে, তবে অনেকগুলো বিষয় এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। আজকে আমরা যে সমস্ত বিষয় বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য”। এছাড়া তিনি ভূমি কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান।
এ সময় সাংবাদিকরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সন্তু লারমা বলেন, ‘সেটা তো আপেক্ষিক অর্থে ভালোই বলতে হবে’।

এখানে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ‘আপেক্ষিক অর্থে ভালো’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তাতে তিনি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা বোঝা মুশকিল। কারণ তিনি ও জেএসএস-এর নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়ত সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অভিযোগ করে আসছেন। তাহলে এখন তিনি কিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ’ভালো’ বলতে পারলেন? এতে কোন দূরভিসন্ধি রয়েছে কিনা তা দেখার বিষয়।
আদতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভালো বলার কোন অবকাশ নেই। প্রতিনিয়ত যেভাবে অন্যায় ধরপাকড়, বিচার বহির্ভুত হত্যা, ভূমি বেদখল, নিপীড়ন-নির্যাতন, হয়রানি, নারী নির্যাতন চলছে তাতে কিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভালো বলা যায়?
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৯৭ সালে চুক্তির আগে জেএসএস ও সরকারের মধ্যেকার বৈঠকের স্থান খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় অতিথি ভবন পদ্মায় স্থানান্তরের পরই সরকার সন্তু লারমাকে বশে আনতে সক্ষম হয় এবং তাকে জেএসএস’র মূল দাবি পাঁচ দফা থেকে সরে এসে চুক্তি করতে বাধ্য করে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারে চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির ৭ম বৈঠকটি কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে আয়োজন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ ও দীপংকর তালুকদারদের সাথে ফটোসেশনের ব্যবস্থা করে সরকার কি আবারো সন্তু লারমাকে বশে আনার কৌশল নিয়েছে? বৈঠক শেষে সন্তু লারমার ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ’আপেক্ষিক অর্থে ভালো’ বলার মধ্যে তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
চুক্তি পুরেপুরি বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয় সবার জন্য মঙ্গল, পার্বত্যবাসীসহ দেশবাসীও সেটা চায়। আমরা সকলে আশা করি সরকার অচিরেই চুক্তির সকল ধারা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে, শুধু বৈঠকের নামে কালক্ষেপণ করে সন্তু লারমাকে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান দমনমূলক পরিস্থিতিকে “ভালো” হিসেবে তুলে ধরে যদি অন্যায়-অবিচার, দমন-পীড়নকে আড়াল করা হয় তাতে কারোর মঙ্গল হবে না।
১১.০৩.২০২৩
* লেখক একজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি।
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখক/লেখকদের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত ]
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন