পানছড়িতে কুসুম প্রিয় ও প্রদীপ লাল চাকমা হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর উপলক্ষে শোক ও স্মরণসভা

0
53

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩

পানছড়িতে উদীয়মান যুবনেতা কুসুম প্রিয় ও প্রদীপ লাল’কে হত্যার ২৫ বছর উপলক্ষে শোক ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে উদীয়মান যুবনেতা কুসুম প্রিয় ও প্রদীপ লাল’কে হত্যার ২৫ বছর উপলক্ষে শোক ও স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পানছড়ি থানা শাখা

আজ ৪ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় “এলাকায় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও খুনে রাজনীতির প্রতিবাদ এবং সন্তু লারমার ঘাতক লেলিয়ে দিয়ে কুসুম প্রিয় ও প্রদীপ লাল চাকমাকে নির্মমভাবে হত্যার স্মরণে’ এ সভার আয়োজন করা হয়।

কুসুম প্রিয়-প্রদীপ লাল চাকমার স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

স্মরণসভার পূর্বে সকাল ৮টার সময় পূজগাঙ স্কুল মাঠে কুসুম প্রিয় ও প্রদীপ লালের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে ইউপিডিএফ’র পক্ষে সম্রাট চাকমা, জিনেট ত্রিপুরা; পিসিপি, ডিওয়াইএফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের পক্ষে তৃঞ্চাকর চাকমা, রিপন ত্রিপুরা ও সাবিনা চাকমা ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  

স্মরণ সভার শুরুতে কুসুম প্রিয়, প্রদীপ লালসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

শহীদদের সম্মানে নিরবতা পালন করছেন স্মরণসভায় উপস্থিত লোকজন।

এরপর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি তৃঞ্চাকর চাকমা’র সভাপতিত্বে ও পিসিপি নেতা সুনীল চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ইপিডিএফ পানছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক আইচুক ত্রিপুরা, পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ’র সংগঠক সুমেন চাকমা,পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা, প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্রদেব চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা সভাপতি এস মঙ্গল চাকমা, চেঙ্গী ইউনয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা, অনিল চন্দ্র চাকমা ও লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা প্রমুখ।

এছাড়া মঞ্চে আরো উপস্হিত ছিলেন,পানছড়ি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিতা ত্রিপুরা, পানছড়ি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অসেতু বিকাশ চাকমা, উল্টাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত চাকমা, লতিবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভূমিধর রোঁয়াজাসহ ও বিভিন্ন এলাকার কার্বারিবৃন্দ।

সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক ও পিসিপি’র সাবেক সভাপতি সুমেন চাকমা বলেন, ১৯৯৮ সালে ঠিক এই দিনে পানছড়ির উদীয়মান যুবনেতা কুসুমপ্রিয় ও প্রদীপ লাল চাকমাকে সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে খুন করে। এর পরপরই তারা হরেন্দ্র, হুরুক্ক্যা, আনন্দ, মৃণাল, দেবোত্তম, রূপক, অনিমেষ চাকমাসহ এ যাবত আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মী, সমর্থককে হত্যা করেছে। ’৯৮ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংঘাত চলার পর জেএসএস ও ইউপিডিএফের সাথে একটি সমঝোতা হলেও গত বছর ১১ জুন তারা সেই সমঝোতার শর্ত ভঙ্গ করে পূনরায় সংঘাত শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, সন্তু লারমা নতুন করে আবারো সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে আজকে পানছড়িতে তার সশস্ত্র বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করছে। সরকারের অন্যায়-অবিচার, ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ যাতে জনগণকে সংগঠিত করে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে না পারে সেজন্য সরকার সন্তু লারমাকে ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করছে। যার কারণে ইউপিডিএফ ও জনগণ বার বার সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানালেও তিনি সংঘাত বন্ধ না করে আরো বাড়িয়ে তুলছেন।

তিনি সবার উদ্দেশ্য বলেন, এই সংঘাত তখনই বন্ধ হবে, যদি জনগণ ব্যাপকভাবে এই সংঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। তাই সংঘাতের বিরুদ্ধে সোচ্চান হোন, যারা সংঘাত চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা বলেন, আজকে যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত সেই সংঘাতের বিরুদ্ধে আমি দৃঢ়কণ্ঠে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। সবাইকে এই সংঘাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি প্রদীপ লাল ও কুসুম প্রিয় চাকমাকে স্মরণ করে বলেন, তারা জীবিত থাকার সময় হাজার হাজার জনগণের সাথে আমরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই সময় গপ্রক বাহিনী, মুখোশ বাহিনী বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলাম। প্রদীপ লাল ও কুসুম প্রিয়’র কথা মনে পড়লে আজও চোখে পানি নেমে আসে।

ইউপিডিএফ সংগঠক আইচুক ত্রিপুরা বলেন, চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের ফলে সাধারণ জনগণ খুবই ভয়-আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আজ সন্তু লারমার ক্ষমতালিপ্সু ও দালালিপনার কারণেই এই সংঘাত। ২০১৮ সালে জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে যে সমঝোতা হয় গত বছর ১১ জুন জেএসএস তা ভঙ্গ করে পানছড়িতে এসে ইউপিডিএফ’র ওপর হামলা। বর্তমানেও জেএসএস’র সশস্ত্র সদস্যরা পানছড়িতে অবস্থান করে জনগণের মধ্যে এক আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে।

তিনি কুসুম প্রিয় ও প্রদীপ লালের হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সন্তু লারমার আসল চেহারা জনগনের মাঝে প্রকাশ করে দেয়ার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ একদিন অবশ্যই খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.