রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের বীর নারী প্রীতিলতার ৯১তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে “ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতার আত্মাহুতি ও দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা” এক আলোচনা সভা করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখা।
আজ রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩) দুপুর ১২ টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমার সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন ইউপিডিএফ’র রাঙামাটি সদর উপজেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিনিসা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন চাকমা ও এলাকার মুরুব্বী হরি কুমার চাকমা। এছাড়া আলোচনা সভায় গণতান্ত্রিক যুবফোরাম কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ধর্মশিং চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, ভারত উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব বিপ্লবী যোদ্ধা সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ। তার এই বীরত্ব ও সাহসিকতা সকল মুক্তিকামী নারীদের মাঝে অনুপ্রেরণার শক্তি হয়ে থাকবে।
তারা আরো বলেন মাত্র একুশ বছর বয়সে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে আত্মাহুতি দেয়ার মতো যে সাহস ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা যেকোন জাতির শোষণ, নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রামে সাহস ও অনুপ্রেরনা যোগাবে।

বক্তারা প্রীতিলতার আত্মাহুতি বিষয়ে বলেন, ১৯৩২ সালের আজকের দিনে বীর কন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি সশস্ত্র টিম চট্রগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমন করে। অতর্কিত এই আক্রমণে অনেক ইংরেজ হতাহত হন, অনেকে পালিয়ে প্রানরক্ষা করেন। এ সময় ইংরেজদের পাল্টা একটি গুলি লেগে প্রীতিলতা আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। জীবিত ধরা পড়লে বিপ্লবীদের গোপনীয়তার ফাঁস হওয়ার ভয় তিনি নিজের পকেটে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে সেখানে আত্মাহুতি দেন। নিজ জীবনকে উপেক্ষা করেই স্বজাতির জন্য তিনি লড়ে গেছেন আমৃত্যু পর্যন্ত। অল্প বয়সে তার এ অমূল্য ত্যাগ বিশ্বের সমগ্র নারী সমাজকে অনুপ্রাণিত করে।

বক্তারা আরো বলেন, বিশ্বের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনার প্রাক্কালে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা রয়েছে। অনেকে ক্ষেত্রে নারীরা সবচেয়ে বেশি সাহসি ভূমিকা পালন করেছেন। আজও নারীসমাজ সকল ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরও বাংলার নারীরা অনেক সাহসি ভূমিকা পালন করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদেরকেও সাহসিকতা নিয়ে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এগিযে আসতে হবে।
আলোচকরা ক্ষোভের সাথে বলেন, বাংলার নারীর বহু আত্মত্যাগ করলেও নারী সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এদেশের নারীরা প্রতিনিয়ত বৈষম্য, নিপীড়ন-নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এদেশে ধর্ষণকারী, অপহরণকারী বা অপরাধীর বিচার হয় না। যার কারণে নারীদেরকে প্রতিনিয়ত অনিরাপত্তায় ভুগতে হচ্ছে। নারী সমাজকে যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশ ও জাতির জন্য কিছু করার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে প্রত্যেক সমাজে হাজারও প্রীতিলতার জন্ম নিতো।
আলোচনা সভায় ভিয়েতনামের লড়াই সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা ও মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারীদের লড়াই সংগ্রামের ওপর ছবি প্রদর্শন করা হয়।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন