বাঘাইছড়ির তদেকমারা কিজিঙে ভাবনা কুটির নির্মাণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
বাঘাইছড়ি(রাঙামাটি): বাঘাইছড়ি উপজেলার তদেকমারা কিজিঙ (দুইটিলায়) ভাবনা কুটির নির্মাণের সুপারিশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি।
গত ২৭ মে মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা মিটিঙের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমাকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার কমিটির নেতৃবৃন্দ তদেকমারা কিজিঙ সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করে আজ বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন প্রদান করেন।
তদন্ত কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রতিবেদনে ৪ দফা সুপারিশ গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছেন। সেগুলো হচ্ছে:
১. এলাকাবাসী যেহেতু আগে থেকে ন্যুনতম বুদ্ধপূজার জন্য সময়ানুযায়ী দৈনিক নির্ধারিত কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে; সেহেতু এলাকাবাসীর ধর্মীয় পবিত্র মনে আঘাত না হানার স্বার্থে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বুদ্ধমূর্তির দরজা উন্মুক্ত করা প্রয়োজন।
২. বুদ্ধমূর্তির পবিত্রতা রক্ষার্থে বর্ষা মৌসুমে জরুরী ভিত্তিতে ছাউনি দেওয়া প্রয়োজন।
৩. চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোন পক্ষ থেকে গৃহ নির্মাণ না করা।
৪. পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় সরকারী এবং বেসরকারী পৃষ্টপোষকতায় আরো অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে; সেহেতু উক্ত জায়গায় ভাবনা কুটির স্থাপন করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে নেতৃবৃন্দ উক্ত এলাকায় বসবাসরত শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি জনগণ যাতে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে জীবন-যাপন করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এছাড়া ধর্মীয় স্বার্থে পাহাড়ি জনগণ যাতে হয়রানির শিকার না হয় এ বিষয়েও তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন- বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে দীপ্তিমান চাকমা ও সুমিতা চাকমা, বঙ্গলতলী ইউপি চেয়ারম্যান তারুসি চাকমা, রূপকারী ইউপি চেয়ারম্যান পারদর্শী চাকমা, বাঘাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অলিভ চাকমা ও মারিশ্যা ইউপি চেয়ারম্যান তন্টুমনি চাকমা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, তদেকমারা কিজিঙে ভাবনা কুটির নির্মাণের লক্ষ্যে এলাকাবাসী ২৭ এপ্রিল হতে একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন কাজ শুরু করে। পরদিন ২৮ এপ্রিল স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা বুদ্ধমূুর্তি স্থাপনের কাজে বাধা দেয়। এরপর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে প্রশাসন উক্ত এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে, যা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। এছাড়া প্রশাসন বনবিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়ে অজ্ঞাত চার শ’ জনের বিরুদ্ধে বাঘাইছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করে। সর্বশেষ গত ২৫ মে এলাকাবাসী খোলা আকাশের নীচে থাকা বুদ্ধমূর্তির উপর ছাউনি দিতে গেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আবারো বাধা দেয়। এসময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এদিন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের জন্য তৈরি করা ইটের গাঁথুনি ভেঙে ফেলে ও বুদ্ধমূর্তির উপর লাগানো ছাউনিটি খুলে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। বর্তমানে উক্ত স্থানে লোকজেনর আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং যেখানে বুদ্ধমূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে সে স্থানটি কাঠের তক্তা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।