কল্পনা চাকমা’র অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে তিন পাহাড়ি সংগঠনের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম : কল্পনা চাকমা অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ভিডিপি কমান্ডার নুরুল হক ও সালেহ আহমদ গংদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকাল ৪টায় তিন সংগঠনের চট্টগ্রাম নগর শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলটি ডিসি হিল হতে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব হয়ে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নগর শাখার সহ-সভাপতি উচিংশৈ চাক (শুভ)’র সভাপতিত্বে যুবনেতা সুকৃতি চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মিনাকী চাকমা। সংহতি জানিয়ে এতে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়ি নেতা এসিংমং মারমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কৃত অপরাধীদের বিচার ও দোষীদের ফাঁসি হলে কল্পনা চাকমার অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও অন্যান্যদের বিচার হবে না কেন? লে. ফেরদৌস কেবল অপহরণের সাথে জড়িত ছিল না, তিনি অপহরণের ঘটনার দু’মাস আগেই বাঘাইছড়ি লাল্যাঘোনা গ্রামে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সে দিন এ বর্বর ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন কল্পনা চাকমা। এভাবেই চরম অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করাই লে. ফেরদৌস কাপুরুষের মত তাকে অপহরণ করে।
বক্তারা আরও বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনগণ ক্ষান্ত হবে না। বাংলাদেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দায়মুক্তি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে আজ সারা বাংলাদেশে খুন-গুম, অপহরণ, বিরোধী মতের উপর দমনপীড়ন ও ধর্ষণের পর হত্যার মত জঘন্য ঘটনাগুলো অনবরতভাবে ঘটে চলেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক সরকার আছে নামে মাত্র, আর পাবর্ত্য চট্টগ্রামে তো সে ৭১’র পর থেকে আজ হতে অদ্যবধি সেনা শাসনই চলছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে যতগুলো গণহত্যা হয়েছে, যতগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে এসবের পিছনে সেনাবাহিনীই প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। সম্প্রতি লংগদুতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনেও সেনাবাহিনীর হাত আছে। বক্তারা কল্পনা চাকমার অপহরণের সুষ্ট বিচার না হওয়া পর্যন্ত পাবর্ত্য চট্টগ্রামে এ অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম জারী রাখার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অনতিবিলম্বে পুলিশী তদন্ত ও শুনানীর নামে তালবাহানা ও কালক্ষেপন না করে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ভিডিপি কমান্ডার নুরুল হক ও সালেহ আহমদকে গ্রেপ্তারপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান।
উল্লেখ্য যে, গত ৭/০৯/২০১৬ইং তারিখে রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান মামলার তদন্তের রির্পোট চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করেন। এই তদন্ত রির্পোট কল্পনা চাকমার বড় ভাই প্রত্যাখান করে আদালতে নারাজী পিটিশন দায়ের করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে শুনানীর নামে শাসক গোষ্ঠী বিচারিক আদালতকে প্রভাবিত করে অপরাধীদেরকে আড়াল করার জন্য চেষ্টা করছে।
আগামী ৮ জুন, ২০১৭ইং রাঙামাটি পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনের উপর কালিন্দী কুমার চাকমার আদালতে যে নারাজী আবেদন করেছেন তার উপর শুনানী হবে।
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।