কাউখালিতে সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানে লিফলেট বিতরণ

0


কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের রাজখালি, ধোল্যাছড়ি, মিটিঙ্যাছড়িসহ আশে-পাশের এলাকায় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও এলাকার সাধারণ জনগণের নিকট একটি লিফলেট বিলি করা হযেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তু গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত একটি গ্রুপ।

কাউখালীর শান্তি প্রিয় সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর নামে সোমবার (১০ নভেম্বর ২০২৫) কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া, কলমপতি ও ফটিকছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও এলাকার সাধারণ জনগণের নিকট লিফলেটটি বিলি করা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘গত ৩১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘাগড়া ইউনিয়নের রাজখালি, ধোল্যাছড়ি, মিটিঙ্যাছড়ি ও তার আশেপাশের এলাকায় বিচরণ করছে। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত অঞ্চল চৌচলাবিল ও সাদেক্যাবিলে অবস্থান করছে এবং চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা চাঁদার দাবিতে ইতিমধ্যে বেতছড়ি ব্রিজের নির্মাণ কাজ জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে।”

লিফলেটে আরো বলা হয়েছে, সশস্ত্র গ্রুপটি যেসব এলাকায় অবস্থান বা ঘোরাঘুরি করছে সে জায়গাগুলো চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক থেকে বেশি দূরে নয় এবং ঘাগড়ার চাম্পাতলি সেনা ক্যাম্প থেকে মাত্র ৫-৬ মিনিটে পৌঁছা যায়। এ রকম জায়গায় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কীভাবে এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে থাকতে পারে, তা ভাবতে অবাক লাগে। আমরা মনে করি, নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি বা সমর্থন ছাড়া সেখানে অবস্থান করা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো তাদের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। কাজেই নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রশ্ন: আপনাদের নাকের ডগায় কীভাবে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল দিনের পর দিন অবস্থান করতে ও অবাধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে? আপনারা এলাকাবাসীর কাছে এর জবাব দিন।”


লিফলেটে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “সন্ত্রাসী গ্রুপটির ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা খুবই রহস্যজনক। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা ওই সন্ত্রাসী দলটির আশেপাশে টহল দিতে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ আমরা জানি, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসী খুঁজতে প্রতিদিন পাহাড়িদের গ্রামে গ্রামে অপারেশন চালায় (এখনও বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন চলমান), তাদের ঘরবাড়ি তল্লাশি করে, সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য জানতে লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করে এবং অনেক সময় নিরীহ লোকজনকে ধরে সন্ত্রাসী সাজিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়। এক কথায়, নিরাপত্তাবাহিনীর ‘সন্ত্রাসী খোঁজার’ তৎপরতার কারণে পাহাড়ি জনগণের জীবন বর্তমানে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তারা এতটুকু শান্তিতে থাকতে পারছে না। অথচ এদিকে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের আশেপাশে অবস্থান ও বিচরণ করছে, তারপরও তারা তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আমরা মনে করি না যে, নিরাপত্তা বাহিনী বা স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটির অবস্থানের বিষয়ে জানে না। কারণ তাদের অবস্থান ও সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমরা যৌক্তিকভাবে মনে করি, উক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটির সাথে প্রশাসন কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর গোপন আঁতাত বা বোঝাপড়া রয়েছে এবং কাউখালিতে সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া অন্য কী কারণ থাকতে পারে? আশাকরি নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন ব্যাখ্যা বা উত্তর দেবেন।”


এতে অবিলম্বে উক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া, কেন এতদিন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, তার জবাব দেওয়া এবং তদন্ত করে এই ব্যর্থতার জন্য দায়ি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

কাউখালিবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে লিফলেটে বলা হয়েছে, কাউখালিকে অশান্ত ও সংঘাতময় করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ান। ষড়যন্ত্রকারীরা যতই শক্তিশালী হোক, ঐক্যবদ্ধ জনগণ তাদের চাইতে শতগুণ শক্তিশালী। তার প্রমাণ গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন। ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিতে ঐক্যবদ্ধ হোন, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে কোন ধরনের সহযোগিতা দেবেন না।


ইতোমধ্যে লিফলেটটি কাউখালি উপজেলা বেতবুনিয়া, কলমপতি ও ফটিকছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিলি করা হয়েছে। বেতবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বেতবুনিয়া কলেজ, বেতবুনিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বেতবুনিয়া রাশখালি জুনিয়র হাই স্কুল, লুঙ্গি পাড়া প্রাইমারি স্কুল, পশ্চিম মনাই পাড়া প্রাইমারি স্কুল, বড়বিলি প্রাইমারি স্কুল, শুনাইছড়ি বাজার, বড়বিলি পাড়া, কালাছড়ি, পূর্ব মনাই, পশ্চিম মনাই লুঙ্গি পাড়া, সাপ মারা পাড়া, মাস্টার ঘোনা, বেতবুনিয়া বাজার, শীলছড়ি হাই স্কুল, এবং পচুপাড়া; ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ডাবুয়া বৃক্ষ ভানুপুর উচ্চ বিদ্যালয় সহ ১নং ওয়ার্ড থেকে ৪নং ওয়ার্ড পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়। আর কলমপতি ইউনিয়নের কোলাপাড়া, মাঝে পাড়া, ১ নং হাতিমারা, ২নং হাতিমারা বড় পাড়া, বড় আমছড়িসহ সব পাড়ায় লিফলেটি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More