কুদুকছড়ি, সাপছড়ি ও নান্যাচরে গুইমারায় তিন শহীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে সেনা-সেটেলার কর্তৃক পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলায় সময় সেনাবাহিনীর গুলিতে তিন বীর শহীদ আখ্র মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও থৈইচিং মারমার স্মরণে শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের ঘোষিত কর্মসূচির সমর্থনে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ি, সাপছড়ি এবং নান্যাচর উপজেলয় একযোগে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল ৫:৩০টায় একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
কুদুকছড়ি: রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের দক্ষিণ কুদুকছড়িতে ‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চ’ এর উদ্যোগে গুইমারার তিন শহীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়।
সাইরেন বাজিয়ে এই প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

পরে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্য সুপন চাকমার সঞ্চালনায় ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চের আহ্বায়ক একি চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেতু চাকমা।
কেতু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বোনের ধর্ষণের বিচার চাইতে ভাইকে মুত্যুবরণ করতে হচ্ছে, জেলে যেতে হচ্ছে, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর রোধ করার চেষ্টা চলছে। অথচ আমরা দেখতে পাই দেশে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক চেতনাকে পাহাড়ে একটি বিশেষ মহল আত্মসাৎ করছে। আমরা দেখতে পাই খাগড়াছড়ি এক মারমা কিশোরী ধর্ষনের বিচার চাইতে গিয়ে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে সেনা-সেটেলাররা পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলা করে তিন জন প্রতিবাদী যুবককে গুলি হত্যা করেছে। আমরা শহীদ আখ্র শহীদ আথুইপ্রু শহীদ থৈইচিং মারমাকে লড়াই সংগ্রামে বীর শহীদ মনে করি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে তারা পাহাড়ের অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে। আমি প্রতিবাদী তিন জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার সাথে জড়িত সেনা সেটলারদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
একি চাকমা বলেন, ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেনা ও সেটলার বাঙালিরা পরিকল্পিত হামলায় তিন জনকে গুলি করে হত্যা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে অথচ আমরা একটিরও বিচার পায়নি।
গত বছরও একজন মোটরসাইকেল চোরের কথিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলায় জুনান, রুবেল, ধন রঞ্জন ও অনিক কুমার নামে চারজনকে হত্যা করা হয়েছিল। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের আজও বিচার হয়নি।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে যত নিপীড়ন নির্যাতন করা হবে প্রতিবাদের আগুন ততই জ্বলবে। আমরা যখন মরতে শিখেছি কেউই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। গুইমারা তিন বীর শহীদ আমাদের অনুপ্রেরনার উৎস। বীর শহীদদের রক্তের মূল্য পরিশোধ করতে ছাত্র যুব সমাজকে আরো অগ্রণি ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
সাপছড়ি: রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি – খাগড়াছড়ি মূল সড়কের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিউটের সামনে সাপছড়ি ইউনিয়ন এলাকাবাসীর উদ্যোগে গুইমারার তিন শহীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন সাপছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীন চাকমা, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য সুমিত্রা চাকমা ও ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য ফুটন্ত চাকমা।

নান্যাচর:
শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের ঘোষিত কর্মসূচির সমর্থনে নান্যাচর উপজেলা সদর, ঘিলাছড়ি ও বেতছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়েছে।
ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জলন অনুষ্ঠানটি বেনুবন বন বিহারে সামনে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে আয়োজন করা হয়। ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ছাত্র জুয়েল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জুম্ম ছাত্র জনতার প্রতিনিধি শ্যামল চাকমা।
বেতছড়িতে বাজারে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নিবন্ধিত ৪টি স্থানীয় ক্লাবের উদ্যোগে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়েছে।
এছাড়া নান্যাচর সদর এলাকায় স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী ব্যানারে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
