কুদুকছড়িতে রাতের আঁধারে বাড়ি তল্লাশির নামে সেনাদের একি কাণ্ড!

0
তল্লাশিকালে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ ও ভাংচুর করা হয়েছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধি ।। রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ি ইউনিয়নের কুদুকছড়ি উপর পাড়া নামক গ্রামে রাঙামাটি রিজিয়নের একদল সেনা সদস্য বাড়ি তল্লাশির নামে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গেছে।

সেনারা ছাত্রীদের একটি ভাড়া ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, বইপত্র এমনকি টয়লেটে ব্যবহৃত বদনাও নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর ২০২১) রাত ১০:৪০টার সময় রাঙামাটি রিজিয়নের একদল সেনা সদস্য তাদের সৃষ্ট কয়েকজন মুখোশ সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে গাড়িযোগে এসে কুদুকছড়ি উপর পাড়ায় হানা দেয়। এ সময় তারা সেখানে কয়েকজন ছাত্রীর ভাড়া করা একটি ঘরে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। তারা ঘরের সকল জিনিসপত্র ভাংচুর ও তছনছ করে দেয়। কাপড়-চোপড় ঘরের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়।

জানা গেছে, সেনাদের আসার শব্দ পেয়ে সেখানে থাকা ছাত্রীরা সবাই পালিয়ে যায়। ফলে ছাত্রীদের অনুপস্থিতিতে সেনারা ঘরে প্রবেশ করে ইচ্ছেমত তল্লাশি কার্যক্রম চালায়। এদিকে, রাতের আঁধারে সেনাদের এমন তল্লাশির খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

সেনারা মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। পরে সেখান থেকে চলে যাবার সময় ছাত্রীদের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, বইপত্রসহ টয়লেটে ব্যবহৃত বদনা পর্যন্ত নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেনাদের এমন তল্লাশির ঘটনায় গ্রামবাসীরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, রাতের আঁধা্রে ছাত্রীদের ঘরে এমন তল্লাশি ও ছাত্রীদের কাপড়-চোপড়, বইপত্রসহ টয়লেটে ব্যবহৃত বদনা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সভ্য দেশে দেখা যায় না, শোনা যায় না। কিন্তু সেনা সদস্যরা তাই করলো!

ঘরের ভেতর থেকে কাপড়-চোপড়গুলো বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

গ্রামবাসীরা জানান, করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। দুর্গম বা দুরের এলাকা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে দূরবর্তী বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে বহু কষ্টে পড়াশোনা করে থাকে। যে ঘরটিতে সেনারা তল্লাশি চালায় সেটি কয়েকজন ছাত্রীর ভাড়া করা একটি ঘর। সেখানে থেকে তারা পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে দুয়েকজন হয়তো কোন সংগঠনের সাথে যুক্তও থাকতে পারেন।

এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, রাতের আঁধারে এসে কারোর ঘর ঘেরাও করে তল্লাশি করা, ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়া কিংবা নিয়ে যাওয়া মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়তই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

তারা বলেন, বাংলাদেশ একট গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে কারোর রাজনীতি বা সংগঠন করার অধিকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার কথা বলেন, সেখানে পাহাড়ি নারী-ছাত্রীরা সংগঠন করলে দোষ কোথায়? এদেশের সংবিধানই তো নাগরিকদের সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। তাহলে রাজনীতি করার অপরাধে রাতে এসে ধরে নিয়ে যাওয়া, ঘর তল্লাশি করা কোন আইনে? সেনাবাহিনীর এমন বেআইনি কর্মকাণ্ড জননিরাপত্তার চরম হুমকি বলে তারা মন্তব্য করেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More