খাগড়াছড়িতে কিশোরী ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে দীঘিনালায় তিন সংগঠনের মানববন্ধন

0

পাহাড়ে ধর্ষণ জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এর দায় নিতে হবে: রোনাল চাকমা


দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় কিশোরী ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা বিধানের দাবিতে দীঘিনালায় প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছে তিন গণন্ত্রিক সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।

আজ সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) সকাল ১০টায় আজ সকাল ১০টায় দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ও জনগণের অংশগ্রহণে বাবুছড়া কলেজ থেকে র‌্যালি সহকারে বাঘাইছড়ি দোর এলাকায় গিয়ে মানববন্ধনে মিলিত হয়।


মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সহপাঠীর ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন এবং “We want justice, we demand justice’, ‘আমাদের সহপাঠী ধর্ষণ কেন, প্রশাসনের জবাব চাই” সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দীঘিনালা উপজেলা শাখার সদস্য মিনা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রোনাল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য সুইটি চাকমা, সাবেক ইউপি সদস্য কৃপারঞ্জন চাকমা। সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জেলা সভাপতি মিঠুন চাকমা।

ছাত্রনেতা রোনাল চাকমা বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়ায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ও কিশোরী স্থানীয় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক গণধর্ষণের শিকার হয়ে আজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিহ্নিত ধর্ষকরা সবাই স্থানীয় বিএনপি’র রাজনীতির সাথে যুক্ত। খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নির্দেশে ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসন বিএনপি’কে বাঁচাতে ৪ জনকে গ্রেফতারের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। অথচ গত ১৭ জুলাই ভাইবোনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ষিতার সহপাঠী, এলাকার স্থানীয় ছাত্র- যুব সমাজ ও জনগণ ঘটনার প্রতিবাদ এবং বিচার চাইতে গেলে সেনাবাহিনী তাঁদের লাঠিচার্জ করে রক্তাক্ত ও আহত করেছে। অর্থাৎ সেনাবাহিনী ও প্রশাসন ধর্ষকদের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ভূমিকা ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এর দায় নিতে হবে।


তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সকল ধর্ম, বর্ণ ও জাতিসত্তার জনগণ অংশগ্রহণ করেছিল।  পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজও চুপ করে বসে থাকেনি।  হাসিনার ডামি নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৭টি ভোটকেন্দ্র ছিল শূন্য। অথচ গণঅভ্যুত্থানের পরে গত ১৮-২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, ২২০টির অধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। সরকার তদন্ত কমিটি করলেও প্রতিবেদন কোন দপ্তরে পড়ে আছে তা আমরা জানি না। বান্দরবানে কেএনএফ সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে শতাধিক বম নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কারাগারে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে কারা হেফাজতে ৩জন বমের মৃত্যু হয়েছে. যা স্পষ্টতই রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে বান্দরবান ও রাঙামাটি সফর করেছে। আজ খাগড়াছড়িতে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গত ৫০ বছর ধরে থাকা পাহাড়ে অশান্তি ও বিভেদ নির্মূলে কাজ করবেন। আমি এনসিপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, তাঁরা পাহাড়ে কিভাবে অশান্তি ও বিভেদ দূর করবেন? পাহাড়ে অশান্তির মূল কারণ তো সেনাশাসন ও বহিরাগত সেটেলার বাঙালি। আর বিভেদ জিইয়ে রেখেছে খোদ রাষ্ট্র। পাহাড়ি জনগণ বরাবরই সরল ও শান্তিপ্রিয়। তাঁরা বিভেদ, হিংসা পছন্দ করেন না। নতুন করেই সম্প্রীতি আমাদের শেখাতে আসবেন না৷ গত ৫০ বছরে সেনাবাহিনীর কথিত ‘সম্প্রীতি ও উন্নয়নের’ গালগল্প আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর ল্যান্স দিয়ে পাহাড়কে দেখলে পাহাড়কে বুঝা যাবে না, সমস্যারও সমাধান হবে না।

সুইটি চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা আমাদের প্রতিবাদের ভাষা শিখিয়ে গেছেন। পাহাড়ে সেনা-সেটেলার আছে বলেই নারী ধর্ষণ, অপহরণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। একমাত্র সেনা-সেটেলার প্রত্যাহার করে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ি  নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

সাবেক কৃপা রঞ্জন চাকমা বলেন, পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে নারী ধর্ষণ ও নিপীড়ন চলছে। গত কিছুদিন আগে যে শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে আগামীকাল তা আমার মেয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। ধর্ষণ বন্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।


সভাপতি মিঠুন চাকমা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরো উৎসাহিত করবে৷ অতীতের কোন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের যথাযথ শাস্তি না হওয়ায় এসব অপরাধ বেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি- অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং পাহাড়ি নারী নিরাপত্তা বিধানে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করতে হবে৷ অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ আরো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More