খাগড়াছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের শহর পরিচ্ছন্ন অভিযান কর্মসূচিতে সেনা-পুলিশের বাধা
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: বিশ্বের অন্যান্য দেশে শহর, রাস্তাঘাট ও গ্রাম-গঞ্জ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে যুবক ও ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করা হলেও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন উল্টো সেনা-পুলিশকে দিয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে ভণ্ডুল করে দিয়েছে।
সংগঠনের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আসন্ন বৈ-সা-বি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু) উপলক্ষে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম আজ ৫ এপ্রিল রবিবার খাগড়াছড়ি শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকেও লিখিতভাবে অবগত করা হয়। সকাল ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক যুবক-যুবতি ও ছাত্র ঝাড়ু, বেলচা সহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে জড়ো হয় মধুপুর বাজারে। সকাল ৯:৪৫টার দিকে খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট মুরুব্বী কিরণ মারমা কর্মসূচি উদ্বোধন করতে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য দান শুরু করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল সেখানে উপস্থিত হয়ে কর্মসূচিতে বাধা দেয়। এ সময় তারা কর্মসূচির ব্যানার ও কিরণ মারমার কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তাকে অপদস্ত করে। কিরণ মারমা ও যুব ফোরামের নেতৃবৃন্দ সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা কোন যুক্তি না মেনে সেখান থেকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের চলে যেতে নির্দেশ দেয়। ফলে কর্মসূচি ভণ্ডুল হয়ে যায়। এ সময় ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন সংবাদিকও হেনস্থার শিকার হন।
যুব ফোরামের সংবাদ সম্মেলন:
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানের মতো একটি সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে প্রশাসনের এ ধরনের বাধাদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিকাল ৪টায় স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকো ত্রিপুরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান সরকার একটি অগ্রহণযোগ্য ও অবৈধ সরকার। নিজের গদি টিকে রাখার জন্য সরকার আজ চরম ফ্যাসিস্ট কায়দায় জনগণের উপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারী বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ১১টি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তারই মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি বিশেষ মহলের হাতে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের সভা-সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণসহ সকল ধরনের গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে চলেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সভা সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক সভা-সমাবেশ এবং সামাজিক ও জনকল্যানমূলক কাজে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, অবিলম্বে আটক পিসিপি’র জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরমের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অঙ্গদ চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১টি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল করা, অন্যায় ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও যত্রতত্র ঘরবাড়ি তল্লাশি বন্ধ করা এবং দীঘিনালা ভুমি রক্ষা কমিটির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচীতে হামলার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের বিচার, আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তিদানসহ উচ্ছেদ হওয়া ভারত প্রত্যাগত ২১ পরিবারকে নিজ নিজ জায়গায় পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা, জেলা শাখার সদস্য সচিব রিপন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা প্রমুখ।
এদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, এ ধরনের কর্মসূচিতে প্রশাসনের স্বাগত জানানো উচিত ছিল। কিন্তু বাধা দিয়ে প্রশাসন একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।