খাগড়াছড়িতে মামুন নিহতের ঘটনার মামলায় মূল আসামিরা সবাই বাঙালি

0

নিহত মো. মামুন-এর স্ত্রীর খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়িতে মোটর সাইকেল চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে মো. মামুন নামে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে পরপর পাহাড়িদের ওপর হামলা-হত্যা, দোকানপাট-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ,বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর-লুটপাট, সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যা-জখমের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

কিন্তু নিহত মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার-এর খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে দেখা যাচ্ছে ঘটনায় জড়িত মূল আসামিরা হলেন সবাই বাঙালি।

মামলায় আসামিদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- ১. মোঃ শাকিল (২৭), পিতা- আব্দুল মান্নান, শালবন(শাপলার মোড়), সদর, ২. রফিকুল আলম (৫৫), পিতা মৃত ওবায়দুল হক, সাং- পানখাইয়া পাড়া, সদর, ৩. দিনারুল আলম (৫০), পিতা মৃত ওবায়দুল হক, সাং- পানখাইয়া পাড়া, সদর। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি উল্লেখ করা হয়েছে। 

এজাহারে বাদী মুক্তা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী (ভিকটিম) প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৭/০৯/২০১৪ ইং বিকাল ১৮:০০ ঘটিকার সময় বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। আমার বাড়িতে মেহমান থাকায় ঘরে যায়গা হবে না বিধার আমার  স্বামী বাড়িতে না এসে দোকানে থাকবে বলে যানায়। যার কারনে আমি রাতে কোন খোজ নেই নাই। সদ্য ২০:৫৫ ঘটিকায় গত ১৮/০৯/২০২৪ ইং সকাল ০৭.০০ ঘটিকার সময় জানতে পারি যে, আমার স্বামী (ভিকটিম) এর দোকানের কর্মচারী স্বাক্ষী শাহিনকে তুলে নিয়ে গেছে। তখন আরো খবর আসে যে, রাত আনুমানিক ২৪০০ ঘটকার সময় ১নং আসামী আমার স্বামীকে ২-৩নং আসামীদের নির্দেশে তার সাথে যেতে বাধ্য করা হলে আমার স্বামী (ভিকটিম) যেতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাকে জোর করে ১নং আসামী ও রুজু করা অজ্ঞাতনামা আসামীগন মিলে তুলে নিয়ে যায়। (উল্লেখ্য ২-৩ নং আসামীর সাথে আমার স্বামীর পূর্ব শত্রুতা রয়েছে) এই খবরের সত্যতা জানতে গিয়ে আমরা ভিকটিমকে খোজা খোঁজি করতে থাকি। এক পর্যায়ে খবর আসে ফেসবুকে কিছু ভিডিওতে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে উল্লেখিত আসামীদেরে নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে আমার স্বামী(ভিকটিম)কে হত্যার চেষ্টা করছে। ঠিক তখনই জানতে পারি আমার ১৯/০৯/২৪ইং স্বামী (ভিকটিম)কে হত্যা করা হয়েছে এবং তার লাশ সদর হাসপতালে আছে। খবর পেয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যাই এবং লাশ সনাক্ত করে পোষ্ট মর্টেম শেষ করার পর বাড়িতে নিয়ে আসি এবং দাপন করি। এর পর আমি আরো জানতে পারি স্বাক্ষী শাহিনকেও সকাল আনুমানিক ০৫.০০ ঘটিকার সময় ১ নং আসামী ও অজ্ঞাতনামা আসামীরা মিলে তুলে নিয়ে গেছে এবং বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। স্বাক্ষী শাহিন এখনও হাসপাতালে চিকিসাধীন আছে।”

তার এই মামলার মধ্যে দিয়ে এটা সুষ্পষ্ট যে, মো. মামুন নিহতের ঘটনায় মূল হোতা হলেন বাঙালিরাই। কিন্তু তারা উল্টো পাহাড়িদের ওপর এ ঘটনার দায় চাপিয়ে দিয়ে উগ্র সাম্প্রায়িক হামলা সংঘটিত করেছে। মূলত পাহাড়িদেরকে  নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার যে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র তার অংশ হিসেবেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে বলে রাজনৈতিক সচেতন মহল ধারণা করছেন।

এখন জনমনে প্রশ্ন, মো. মামুন নিহতের ঘটনাকে পুঁজি করে ইতিমধ্যে পাহাড়িদের ওপর যে হামলা, বাড়িঘর-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর-লুটপাট ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কারা এর জন্য দায়ি? প্রশাসনই বা কেন হামলা নিয়ন্ত্রণ করেনি? সেনাবাহিনী কেন নির্বিচারে গুলি করে হত্যাকাণ্ড ঘটালো?



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More