খাগড়াছড়িতে ৬২তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত : পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘন বন্ধের দাবি

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
অবিলম্বে মিটিঙ-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নাও, সার্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত হোন এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ১০ ডিসেম্বর ৬২তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে র‌্যালী ও সমাবেশের আয়োজন করে। সকাল ১১টায় র‌্যালীটি স্বনির্ভর বাজার থেকে শুরু হয়ে খাগড়াছড়ি সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার স্বনির্ভর বাজারে এসে এক সমাবেশ আয়োজন করে। স্বনির্ভর বাজার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি রেমিন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিশুক চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আপ্রুসি মারমা এবং সমাবেশ পরিচালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অহরহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। যারা জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।

সমাবেশে থুইক্যসিং মারমা বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক ভুমি বেদখলের চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। রূপগঞ্জে আর্মি হাউজিং-এর নামে, বান্দরবানে সেনা গ্যারিসন সম্প্রসারণের নামে এবং সাম্প্রতিক খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির লেমুছড়িতে সেটলার বাঙালিরা সেনাবাহিনী সহায়তায় পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের চক্রান্ত চালাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানী ও ব্যক্তির নামে লিজ নেয়ার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার একর জমি বেদখল করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার না করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান না করে সর্বোপরি পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা কিছুতেই সমর্থন যোগ্য হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়িতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হয়েছে। আমরা যখন গণতান্ত্রিকভাবে দাবি আদায়ের আন্দোলন করতে যাই তখন প্রশাসন বাধা সৃষ্টি করে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে কার্যক জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করে রেখে প্রতিনিয়ত নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। গত ২৩ ও ২৯ আগস্ট রাঙামাটির নান্যাচর থেকে পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে যে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

কণিকা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণ নামে সেনা শাসন অব্যাহত রাখা হয়েছে। মিছিল সমাবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তিনি বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণ একটি জঘন্যতম ঘটনা। তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারাগুলো মেনে চলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, সেনাশাসন অপারেশন উত্তরণ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, লেমুছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ভূমি বেদখল বন্ধ করা, নারী নির্যাতন সহ সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ করা, কল্পনা চাকমা অপহরণ সহ এ যাবতকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিচার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান।

উল্লেখ্য যে, ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। তখন থেকেই এ দিনটিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More