গুইমারায় সেনা-সেটলার হামলার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ

0


সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

খাগড়াছড়ির গুইমারায় রামসু বাজারে ২৮ সেপ্টেম্বর সেনা-সেটলারের সশস্ত্র হামলা, নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে খুন-জখম-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং ঘটনার বিচারের দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটি ও ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ৯টার সময় সাজেকের লাদুমনি বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন শ্লোগানে পর্যটন সড়ক হয়ে উজোবাজারে এসে বাজার প্রদক্ষিণ শেষে সমাবেশে মিলিত হয়। 

বিক্ষোভের ব্যানার শ্লোগান হলো “পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার কর, আর নয় খুন-ধর্ষণ-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, এবার হবে প্রতিরোধ”।


সমাবেশে ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য বিজয় কান্তি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমা, সাজেক জুমচাষী কল্যাণ সমিতি সভাপতি জ্যোতিলাল চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি জ্যোতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশাখা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক সমর চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সহসভাপতি উজ্জলা চাকমা।

বাবু ধন চাকমা গুইমারায় সেনা-সেটলার হামলা, তিন পাহাড়ি যুবককে খুন ও রামসু বাজার ও আশেপাশে পাহাড়িদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় মারমা কিশোরী ছাত্রী ধর্ষণের বিচার দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালনকালে পরিকল্পিতভাবে সেনা-সেটলাররা এই হামলা চালিয়েছে। তিনি এই ঘটনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন, সরকারকে অবিলম্বে এই হামলায় জড়িত সেনা-সেটলারদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।


তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে গুইমারা ও খাগড়াছড়িতে হামলার ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে, সেই ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত বাকী দুই জনকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। উপরন্তু ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে মেডিকেল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় হামলাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।   

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগামে এখনো সেই আগের ফ্যাসিস্ট সরকারগুলোর শাসননীতিই বলবৎ রাখা হয়েছে। বর্তমানে ফ্যাসিস্টদের চেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাবুধন চাকমা অবিলম্বে গুইমারা রামসু বাজারে পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত হামলাকারী সেনা-সেটলারদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডারকে অপসারণ, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের সুচিকিৎসা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন ও সেটলারদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জ্যোতি চাকমা বলেন, পাহাড়ে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। খাগড়াছড়ি সিঙ্গিনালায় মারমা কিশোরী ধর্ষণের বিরদ্ধে জুম্ম ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুইমারায় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার, হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের দায় সরকারকে নিতে হবে।

তিন শাসকগোষ্ঠির এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ছাত্র-যুব-নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

বিশাখা চাকমা বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বানচাল করে দিতে পরিকল্পিতভাবে গুইমারায় জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সেনা-সেটলার কর্তৃক হামলা, গুলি করে হত্যা ও দোকানপাট-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযাগ করা হয়েছে। এই হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

তিনি অবিলম্বে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণকারী সকল অপরাধীকে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা ও গুইমারা হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।


সমর চাকমা বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারা রামসু বাজার জুম্ম ছাত্র জনতার আহ্বানে সড়ক অবরোধ পালন করতে গিয়ে সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে তিন জন মারমা যুবককের গুলি করে হত্যা করে, পাহাড়িদের ঘরবাড়ি-দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়। এ হামলার ঘটনায় জড়িত সেনা-সেটলারদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।

তিনি সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

উজ্জলা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যে সব হামলা ও গণহত্যা হয়েছে সে সকল ঘটনায় সেনাবাহিনী জড়িত রয়েছে। গুইমারার রামসু বাজারে হামলার ঘটনায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও এসব ঘটনার কোন বিচার পাইনি। এ সময় তিনি ২০০৮ ও ২০১০ সালে সাজেকে সেনা-সেটলারদের হামলা, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধপুদি, লক্ষী বিজয় ও লাদু মনিকে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন এবং বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নতুন জয় চাকমা বলেন, পাহাড়ের জনগণ শান্তিতে বিশ্বাসী। গুইমারায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর যেভাবে সেনা-সেটলার কর্তৃক হামলা চালিয়ে তিনজনকে খুন, অনেককে জখম ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি   অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে আহ্বান জানাবো, আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিন। সেনাবাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করেন। সাজেক কলেজ নির্মাণে সেনাবাহিনীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন। অবিলম্বে গুইমারা হামলায় জড়িত সেনা-সেটলারদের আইনের আওতায় আনুন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

তিনি গুইমারা ও খাগড়াছড়ি সদরে সংঘটিত সেনা-সেটলার হামলার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘকে জড়িত করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More