গুলিবিদ্ধ গার্মেন্টস শ্রমিক চম্পা খাতুনের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
অব্যাহতভাবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি
ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
গত ২৩ অক্টোবর আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার জেনারেশন নীট কোম্পানীর শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ গার্মেন্ট শ্রমিক চম্পা খাতুন-এর মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চম্পা খাতুন মারা যান।
ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ আজ সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়নের ঘটনা রাষ্ট্র-সরকারের বর্বরতাকেই তুলে ধরে। গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার এপেক্স টেক্সটাইল প্রিন্টিং মিলস লিমিটেডের শ্রমিকরা– ত্রিপক্ষীয় ১৮ দফায় ঘোষিত বর্ধিত হাজিরা বোনাস কার্যকর করার দাবিতে বিক্ষোভ করছিলো। এতে সেনাবাহিনী এবং শিল্প পুলিশ হামলা চালায়, ছত্রভঙ্গ করে এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর গাজীপুরের টিএনজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা ৩ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নামে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন,“গাজীপুর, আশুলিয়ার গার্মেন্টস শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করছে না। এ নিয়ে শ্রমিকরা একাধিকবার সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। শ্রমিক অসন্তোষ এবং মালিক পক্ষের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যাতে উল্লেখ ছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত কারখানা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করবে। অনেক কারখানা তা লঙ্ঘন করেছে। এর প্রতিবাদে স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বারবার সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, যৌথ বাহিনীর হুমকি-বাধা- হামলা চলে আসছে। এমনকি আমরা দেখলাম গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে।
তারা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শত শত শ্রমিক-মেহনতি মানুষ রক্ত দিয়েছে একটি নিপীড়নমুক্ত, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য। অথচ, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে উল্টো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নেতৃত্বে হুমকি, বাধা, হামলা, শ্রমিক হত্যা চলছে; যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং হত্যা ও নিপীড়নের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান। একই সাথে যে সকল মালিক মজুরি বকেয়া রাখাসহ নানাভাবে শোষণ-জুলুম জারি রেখেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়া।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার জেনারেশন নীট কোম্পানীর শ্রমিকরা আন্দোলন করছিলো। কারখানাটি শ্রমিকদের ৪ মাসের বেতন-বোনাস বাকী রেখে দেড় মাস আগে নিজেদের বন্ধ ঘোষণা করে। এতে বিপাকে পড়ে কয়েক হাজার শ্রমিক। শ্রমিককরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে এতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে চম্পা খাতুন, মুর্শেদা বেগমসহ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে চম্পা খাতুন আজ সকালে মৃত্যুবরণ করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।