চট্টগ্রামে ইউডব্লিউডিএফের বিক্ষোভ সমাবেশ, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিসহ ৪ দফা দাবি

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

মহান মে দিবসে “শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিপীড়িত জাতি ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হোন” স্লোগানে ‘চট্টগ্রামে সিইপিজেড-এর এলসিবি গার্মেন্টসে  শ্রমিক উৎপল তঞ্চঙ্গ্যা মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবিতে’ চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিক সংগঠন ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ), চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

আজ ১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৩:৩০ টায় চট্টগ্রাম নগরীর ডিসি হিল থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেরাগি পাহাড় মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তিন শতাধিক শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে ইউনাইনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমার সভাপতিত্বে ও বৃহত্তর পার্বত্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অংহ্লাচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সমর চাকমা।

মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, আজকে বিশ্ব জুড়ে শ্রমিকরা যে ৮ ঘন্টার শ্রমের বিনিময়ে শিল্প কারখানায় কাজ করছে তার জন্য রয়েছে শ্রমিকদের আত্মত্যাগ। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা নিজেদের দাবি আদায়ে জীবন উৎসর্গ করেছিল। সেদিন শ্রমিকদের তাজা রক্তের বিনিময়ে ৮ ঘন্টা শ্রম ও ন্যায্য মজুরির অধিকার আদায় সম্ভব হয়। যে দিনটি আজকে মহান মে দিবস হিসেবে গোটা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমঘন্টা এবং ন্যায্য মজুরি আদায় করা সম্ভব হলেও বাংলাদেশে তার ব্যাতিক্রম। এখানে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং শ্রমঘন্টা নির্ধারণ না করে উল্টো শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিইপিজেডে LCB গার্মেন্টসে কর্মরত উৎপল তঞ্চঙ্গ্যা নামের একজন শ্রমিককে অসুস্থ হওয়ার পরেও ছুটি প্রদান করেনি কারখানার কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে বেশি অসুস্থবোধ করায় তাকে ছুটি প্রদান করা হলেও উৎপল তঞ্চঙ্গ্যার বেঁচে থাকা সম্ভব হয়নি। অসুস্থ অবস্থায় আগ্রাবাদের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। উৎপল তঞ্চঙ্গ্যার এই মৃত্যুর দায় অবশ্যই কারখানার মালিক ও কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।


তারা বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের শ্রমকে কেড়ে নিয়ে মালিকেরা দেশে-বিদেশে আনন্দ উদযাপন করে। শ্রমিকেদের ঘামের মূল্য দিয়ে মালিকেরা এসি রুমের মধ্যে দিনযাপন করে। পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুধুমাত্র জীবীকার তাগিদে শহরে আসা শ্রমিক ভাই-বোনদের যদি এভাবে মৃত্যবরণ করতে হয় তাহলে রাষ্ট্রও এই কাঠামোগত হত্যার দায় এড়াতে পারে না।

বক্তারা বলেন, সারাদেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীরা এমনিতেই অনিরাপদ। ঘরে বাইরে নারীদেরকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। তাই নারীদের নিরাপত্তা ও শ্রমিক শোষণ বন্ধ করে শ্রমজীবী মানুষদের জীবন-ধারণের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

সমাবেশ থেকে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-

১. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ২৫,০০০ টাকা করতে হবে।
২. জোরপূর্বক শ্রমশোষণ বন্ধ করে ৮ঘন্টা শ্রম নিশ্চিত করতে হবে।
৩. শ্রমিক উৎপল তঞ্চঙ্গ্যার কাঠামোগত হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিবারের কাছে মৃত্যর দায় নিয়ে যথাযথ ক্ষতিপুরণ প্রদান করতে হবে।
৪. গর্ভবতী নারী শ্রমিকদের ন্যূনতম ৬ মাস ছুটি প্রদান করতে হবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More