চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল-বিনোদন পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি ৯ ছাত্র সংগঠনের
নিজস্ব প্রতিনিধি ।। দেশের প্রগতিশীল ৯ ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তারা ম্রোদের চলমান আন্দোলনে সংহতি এবং অবিলম্বে ম্রোদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা সেনাবাহিনী ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জাতিগত নিধন ও পাহাড় দখল বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১) সংবাদ মাধ্যমে এই বিবৃতি প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি বিপুল চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, সামজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনিক।
বিবৃতিতে ছাত্র সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিতর্কিত সিকদার গ্রুপ ও সেনা কল্যাণ ট্রাষ্ট কর্তৃক পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের নামে বস্তুত বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় থেকে ম্রোদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র চলছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সিকদার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান আরএন্ডআর হোল্ডিংস্ ও সেনা কল্যাণ ট্রাষ্ট কর্তৃক চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে শুরু থেকে স্থানীয়ভাবে ম্রো জনগোষ্ঠী প্রতিবাদ করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৭ অক্টোবর বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান, ৮ নভেম্বর কালচারাল শোডাউন এবং সর্বশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ চিম্বুকের নাইতং পাহাড় থেকে বান্দরবান সদর পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার লংমার্চ ও সমাবেশের মাধ্যমে অবিলম্বে উক্ত প্রকল্প বাতিলের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আমরা ম্রোদের আন্দোলনের প্রতি পূর্ণসমর্থন ব্যক্ত করছি এবং স্থানীয় জনগণের মতের বিরুদ্ধ বিতর্কিত এই পর্যটন স্থাপনা বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে ৯ ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে গণবিরোধী এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ইতোমধ্যে বিতর্কিত এই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে হিল ট্র্যাক্টস কমিশন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ নানা সংস্থা। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী ও সেনা প্রধান বরাবর ৫৯ বিশিষ্ট নাগরিক চিঠি দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলের মতামতকে উপেক্ষা করে চিম্বুকের পর্যটন নির্মাণের অটল রয়েছেন সিকদার গ্রুপ ও সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট। পাহাড় দখল ও জাতি নিধনের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে এখনো সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। যা আরো বেশি ধোয়াশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তারা বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে এই পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের ফলে ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রায় এক হাজার একর জমি বেদখল হবে। প্রত্যক্ষভাবে ৬টি পাড়া উচ্ছেদের সম্মুখীন হবে এবং ১১৬টি পাড়ার আনুমানিক ১০ হাজার বাসিন্দার জুমচাষের ভূমি, শ্মশান ভূমিসহ পানির উৎস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়াও তাদের সংরক্ষিত পাড়াবন ও জীববৈচিত্র্য অচিরেই ধ্বংস হবে।
উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে জাতি নিধনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে এবং ম্রো জাতিসত্তার জীবন-জীবিকা কেড়ে নিয়ে চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করা চলবে না। পাহাড়-সমতলে ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।