‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের আলোচনা সভা

১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অবমাননা দিবসে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠন আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
খাগড়াছড়িতে ‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ আলোচনা সভা করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।
আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভার ব্যানার শ্লোগান ও আহ্বান ছিল “জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া আপোষ চুক্তিতে নয়, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার একমাত্র সমাধান”; “পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের গৌরবোজ্জ্বল দীপশিখা উর্ধ্বে তুলে ধরে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই এগিয়ে নিন”।
আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক অনিমেষ চাকমা।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।
সভায় অংগ্য মারমা বলেন, জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ’৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জেএসএস’র আপোষ চুক্তি ও পরে ’৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পাহাড়ের পরিস্থিতি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়।
তিনি আরো বলেন, জেএসএস জনগণের রক্ত-ঘামে কেনা অস্ত্র সরকারের কাছে জমা দিলেও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বার্থ রক্ষা হয়নি। আত্মসমর্পণের পর জেএসএস জনগণের স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থে সরকারের সুবিধাভোগী হয়েছে। তারা জুলাই-আগস্ট দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়েও ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদেরও নানা তকমা লাগিয়েছে।

সভায় বক্তব্য রাখছেন অংগ্য মারমা
তিনি আরো বলেন, দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা চুক্তি বাস্তবায়নসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলনে নামলেও জেএসএস তাতে সমর্থন দেয়নি, বরং নানা তকমা ও হুমকি-ধমকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বানচাল করে দিয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় যে, জেএসএস জাতির স্বার্থে কাজ করতে চায় না এবং ভবিষ্যতেও কাজ করবে না। তারা বিভক্তি জিইয়ে রেখে শাসকগোষ্ঠিকে লাভবান করতে চায়। তাই আমাদেরকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে অবিচল থাকতে হবে।
নীতি চাকমা বলেন, ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জেএসএস’র আপোষ চুক্তি ও অস্ত্র জমা দেয়ার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের জন্য সুখকর হয়নি। শেখ হাসিনা পাহাড়ি জনগণের আন্দোলন ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে জেএসএস তথা সন্তু লারমারকে নানা সুবিধাদি দিয়ে শান্তিবাহিনী সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে জনগণকে অধিকারহীন করেছে। আগামীতেও যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

সভায় বক্তব্য রাখছেন নীতি চাকমা
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৪ সালের আজকের এই দিনে তৎকালীন পিসিপি’র নেতৃত্বে খাগড়াছড়িতে বিএনপি সরকারের অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে তা মুছে দিতেই ১০ ফেব্রুয়ারিকে জেএসএস’র অস্ত্রসমর্পণের দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু পাহাড়ের ছাত্র সমাজ সেই বীরত্বের ঘটনা ভুলে যায়নি। খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সন্তু লারমার নেতৃত্বে জেএসএস সদস্যদের অস্ত্রসমর্পণের দিনই তিন সংগঠনের লড়াকু সেনানীরা পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ব্যানার উঁচিয়ে ধরে তা প্রমাণ করে দিয়েছিল।

সভায় বক্তব্য রাখছেন অনিমেষ চাকমা
অনিমেষ চাকমা বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় অবমাননা দিবস হিসাবে বিবেচিত। ১৯৯৮ সালের এই দিনেই খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সন্তু লারমার নেতৃত্বে জেএসএস তথা শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নিকট অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি জনগণের রক্তে ভেজা আন্দোলন শেষ করে দেয়া হলেও জনগণ তাদের কাঙ্খিত অধিকার পায়নি।
তিনি বলেন, যে দিন জেএসএস অস্ত্রসমর্পণ করে তার মাত্র ৪ বছর আগে ১৯৯৪ পিসিপি’র নেতৃত্বে খাগড়াছড়িতে বিএনপি সরকারের জারি করা অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ’৯৮ সালে সেই বীরত্বপূর্ণ দিনটিকে কলঙ্কিত করে সন্তু লারমা নেতৃত্বে জেএসএস সদস্যরা নির্লজ্জভাবে শেখ হাসিনা সরকারের নিকট আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে।

সভায় বক্তব্য রাখছেন কণিকা দেওয়ান
কনিকা দেওয়ান বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। যার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু ঘটনা। এই সব ইতিহাস আমরা কখনো ভুলতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, পাহাড় থেকে অবৈধ সেনাশাসন তুলে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা কখনো স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবো না। আজকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও পাহাড়ে এখনো সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলছে সেনা নিপীড়ন ও নির্যাতন। চলছে পাহাড়িদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করে জাতিগত নিধনের সুগভীর ষড়যন্ত্র।
তিনি সবাইকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার ন্যায়সঙ্গত অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।