২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রচারপত্রে

জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান ইউপিডিএফ’র

0

নিজস্ব প্রতিনিধি ।। পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইকারী রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) জাতীয় অীস্তত্ব রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে।

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে ইউপিডিএফ এই আহ্বান জানায়।

উক্ত প্রচারপত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বিষয়ে বলা হয়, ভূমি বেদখল, বন উজাড় ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে সড়ক নির্মাণ, বান্দরবানের চিম্বুকে ম্রো জাতিসত্তার আবাসভূমিতে পর্যটন-পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করে উচ্ছেদ অভিযান, অনুরূপভাবে রাঙ্গামাটির সাজেকের উত্তর রুইলুই গ্রামের ১৭ ত্রিপুরা পরিবার উচ্ছেদের লক্ষ্যে তাদের ঘরবাড়ি মেরামত ও নির্মাণে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাধা দান এবং এ ঘৃণ্য কাজে কতিপয় পাহাড়ি দালালের যোগসাজশ এলাকাবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। দীঘিনালার বাবুছড়ায় পাহাড়িদের বাড়িঘরের নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় ও সংগ্রহের ওপর সেনাবাহিনীর বেআইনী নিষেধাজ্ঞা জারি, সাজেকের বাঘাইহাট থেকে উজোবাজার-মাচালং বাজারে জিপ-ট্রাকে মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে স্থানীয় সেনারা জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। অন্যদিকে সরকার-প্রশাসনের মদদে অপসংস্কৃতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে, অন-লাইনে জুয়ায় আসক্তি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ২০১৪ সালের ১৪ মে দীঘিনালার বাবুছড়ায় বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারকে এখনও নিজের জমি ফিরিয়ে দেয়া হয়নি, তারা গত সাড়ে সাত বছর ধরে অনাহারে অর্ধাহারে ভিখিরির মতো দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করা হয়নি এবং ভারত প্রত্যাগত অনেক শরণার্থীকেও গত ২৪ বছরে তাদের জমি ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। উপরন্তু এখনও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়িদের ভূমি জোরপূর্বক কেড়ে নেয়া হচ্ছে।

পাহাড়ি জনগণ সংকটে রয়েছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ’৮৯-এর ‘জেলা পরিষদ’ ব্যবস্থার মতোই ’৯৭-এর ‘পার্বত্য চুক্তি’র ফলে পাহাড়ি জনগণ বর্তমানে গভীর সংকটে নিমজ্জিত। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয়েছে এক গুরুতর অচলাবস্থা। পাহাড়ি জনগণের এ দুর্বলতার সুযোগে শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে বাপ-দাদার বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত করতে সাহস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের মতো আরও একটি ছাত্র-গণজাগরণ!

উক্ত প্রচারপত্রে আরও বলা হয়, ‘পার্বত্য চুক্তি’ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এক ধাপ্পাবাজি, এ বাস্তব সত্য মেনে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করা জরুরি কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, চুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন করেছে, অসামান্য ত্যাগ স্বীকারেও পিছ পা হয়নি। ‘পার্বত্য চুক্তি’র পর জনগণের শক্তি বিভক্ত ও দুর্বল হবার কারণে আন্দোলন গড়ে তোলা যাচ্ছে না। কিন্তু এ অবস্থা সব সময় থাকবে না। মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিরোধ সংগ্রাম সুদীর্ঘ কালের। অতীতে পার্বত্যবাসী কখনও বহিঃশক্তির আগ্রাসন বরদাস্ত করেনি, জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করে নিজেদের স্বকীয় স্বাধীনসত্তা টিকিয়ে রেখেছিল। এমন গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের উত্তরসূরী পাহাড়ি জনগণ বিভক্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে থাকবে, যুগ যুগ ধরে মার খেয়ে যাবে, তা হতে দেয়া যায় না। কোনো আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি এ অবস্থা মেনে নিতে পারে না। শাসকগোষ্ঠীর পদতলে নিষ্পেষিত হয়ে আমরা নিজেদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এবার উঠে দাঁড়ানোর পালা!!!

এ উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। অতীতে শাসকগোষ্ঠীর আসল রূপ পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও ‘পার্বত্য চুক্তি’র দুই যুগ অতিক্রান্ত হবার পর তা উন্মোচিত হয়েছে। এখন কারোর আর আওয়ামী লীগকে চেনার বাকী নেই। এরপরও চুক্তি বাস্তবায়নের আশায় শাসকগোষ্ঠীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা হবে চরম আত্মঘাতি।

এতে বলা হয়, অতীতে জেএসএস’এর সাথে ইউপিডিএফ-এর রাজনৈতিকভাবে যত মত পার্থক্য থাকুক, যত তিক্ততাই থাকুক, জাতীয় অস্তিত্বের চেয়ে সে সব বড় কিছু নয়। প্রিয় জন্মভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি আমরা অধিকার ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে তিক্ততা-বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষাই এখন আমাদের প্রধান কর্মসূচি হওয়া জরুরি। যারা আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব বিপন্ন করতে চায়, তারাই আমাদের প্রধান শত্রু! যারা শাসকগোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়ে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত, তারা জাতীয় বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতক।

প্রচারপত্রে জেএসএস-এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- আসুন, জাতিসত্তার স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার, দমন-পীড়ন, নারী নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদি ন্যুনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত হলো শাসকগোষ্ঠীর পাতানো ফাঁদ; ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসুন!

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্রে বলা হয়,

– বিতর্কিত সংস্থা র‌্যাব-এর সাবেক ও বর্তমান প্রধানদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিন!

– নিজেদের পেশাগত মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুন্ন করবেন না, পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান হোন!

– অবৈধ সরকারের নীল নক্সা বাস্তবায়নে যুক্ত হয়ে অপরাধী হবেন না!

– অন্যায়ভাবে নিরীহ লোকজনের ওপর দমন-পীড়ন হয়রানি বন্ধ করুন!

– কায়েমী স্বার্থবাদীদের সাথে যুক্ত হবেন না!

– সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব করবেন না!

–  সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মদদদান বন্ধ করুন!

শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট বিপথগামীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়,

– শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সরে দাঁড়ান!

– সেনা খপ্পড় থেকে বেরিয়ে আসুন, স্বার্থসিদ্ধির পর তারা পাশে থাকবে না, পাশে রাখবে না;

– জাতীয় আন্দোলনে প্রতিবন্ধক হবেন না, ’৭১-এর রাজাকারদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিন!

উক্ত প্রচারপত্রে নিন্মোক্ত দাবির ভিত্তিতে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানানো হয়।

* ফ্যাসিবাদী শাসন মানি না, অবিলম্বে অস্থায়ী জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে!

* নতুন সংবিধান চাই, সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে!

* আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ বিনা বিচারে আটক রাজবন্দীদের নিঃশর্তে মুক্তি চাই!

* বিতর্কিত সংস্থা ‘র‌্যাব’ ভেঙে দাও, ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ গঠনের পাঁয়তারা চলবে না!

* নির্বিচারে ধরপাকড়-হয়রানি-তল্লাশি বন্ধ কর!

* সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ নির্মাণ বন্ধ কর!

* অস্ত্র গুঁজে দিয়ে একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তার প্রমোশন বাণিজ্য চলবে না, বন্ধ কর!

* বিজয় দিবসে লতিবান পাঠাগারে হামলাকারী ও বগাছড়িতে ২০১৪ সালে অগ্নিসংযোগকারী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার কর, শাস্তি দাও!

* মুসলিমশূণ্য সাজেকে মসজিদ নয়, স্কুল-হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে!

* সাজেকের বাঘাইহাটে জিপ-ট্রাক নিয়ে মাল পরিবহনে হয়রানি চলবে না!

* ক্ষমতাসীন দলীয় কর্মীদের বাড়াবাড়ি বরদাস্ত করবেন না!

* অস্তিত্ব রক্ষার্থে এক হও, বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোল!

  • প্রচারপত্রটি নিচে দেওয়া হলো:

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More