জীবন যুদ্ধে দুই চোখ হারালেন রাজস্থলীর চিংচিংমং তঞ্চঙ্গ্যা
পথ চলতে হঠাৎএকটি ফায়ারের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হয়েছিল চোখে আগুন লেগেছে। আর কিছুই দেখলাম না। প্রচন্ড ব্যথায় মাটিয়ে শুইয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম একদল ফরেষ্টার আসছে। আমার কাছে এসে একে অন্যকে বলছে যাক লোকটি মারা গেছে। এ বলে তারা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর অনুমান করে আমি হাটা শুরু করলাম। কোনখানে থেকে মানুষের কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে না। খিদের যন্ত্রনা ঝিড়ি পানি আর কলা গাছ কামড় দিয়ে খেলাম। এভাবে রাত-দিন কেটে গেল। আমার শরীর, চোখে ও বিভিন্ন স্থান মাছি বসিয়ে পঁচন ধরল। ৬ষ্ট দিনে একদল ফরেস্ট স্টাফ সম্ভবত বাগান ভিজিট করতে এসেছে। মানুষের কণ্ঠ শুনে আমি বললাম, আমাকে একটু বাঁচাও। ফরেষ্ট স্টাফরা আমাকে দেখে খুব দুঃখ প্রকাশ করল। তারা আমাকে উদ্ধার করে আড়াছড়ি মুখ পাড়া নিয়ে আসে। সেখানে এক তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ীতে রেখে যায়। তারপর বাড়ীর লোকজন খবর পেয়ে আমাকে বাড়ীতে নিয়ে যায়।
চিংচিংমং বড় ভাই ক্যমং তঞ্চঙ্গ্যা জানান, খবর পেয়ে আড়াছড়ি মুখ থেকে ছোট ভাইকে দেখতে যাই। শরীরের পচঁন ধরে পোকা-মাকড় বসেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে থেকে আবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতাল কলেজের পাঠানো হয়। সেখানেও সুস্থ হতে পারেনি। পরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়। অনেক টাকা খরচ করেও দু’চোখ কোনভাবে আর পৃথিবী দেখার সুযোগ হল না।
এক লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে চিংচিংমং বলল, দাদা সবই কর্মের দোষ, বেঁচেও আমি মরার মত আছি। আর মরলে এখন মানুষ হয়ে আবার বাঁচতাম। এই চোখের অন্ধত্ব জীবন নিয়ে বর্তমানে এক ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীর সুজতাকে নিয়ে কোরবান ছড়ার মুখে মুদির দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছি।