জেএসএস সন্তু গ্রুপ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে গোপন আঁতাত সম্পর্কে

মন্তব্য প্রতিবেদন
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপ জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। তারা স্বজাতিকে অনিষ্ট করতে ও নিজের ভাইয়ের বুক ঝাঁঝরা করে দিতে জাতীয় শত্রুর সাথে মোলাকাত করতেও কসুর করে না। এটা এখন স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সম্পর্ক গভীর হয়েছে এবং তাদের মধ্যে গোপন সমঝোতা রয়েছে। ইউপিডিএফ-বিরোধী চলমান সেনা অভিযানে বিভিন্ন জায়গায় সন্তু গ্রুপের লোকজন সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত ৮ অক্টোবর সকালে সাজেকের বড় কমলাকে (উদয়পুরের সামান্য উত্তরে) নিরাপত্তা বাহিনীর এক কমান্ডারের সাথে সন্তু গ্রুপের কমান্ডারদের সাক্ষাত হয়। তাদেরকে হাসিমুখে করমর্দন করতে দেখা যায়, যা প্রত্যক্ষদর্শী জুম্ম গ্রামবাসীদের হতবাক করেছে। এই করমর্দন তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ, গভীর ও আন্তরিক সম্পর্কেরই বহিঃপ্রকাশ।
গত ১৮ অক্টোবর থেকে সাজেকে চলমান সেনা অপারেশনে সেনা সদস্যদের সাথে বিকাশ চাকমা ওরফে বড়কানা (৪৫) নামে সন্তু গ্রুপের একজন কমান্ডার রয়েছে। তার পিতার নাম মৃত যামিনী কুমার চাকমা। বাড়ি দীঘিনালার মেরুং হলেও বর্তমানে সে মিজোরাম সীমান্তবর্তী গ্রাম উদয়পুরে অবস্থান করছে। বিকাশ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে অপারেশনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, সন্তু গ্রুপের লোকেরা সেনাবাহিনীকে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিচ্ছে, যার ওপর ভিত্তি করে সেনারা লোকজনের ওপর নিযাতন চালাচ্ছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। লোগাং-এর মাচ্যছড়ায় অবস্থানরত জেএসএস (সন্তু) দলের সশস্ত্র সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনীর দু’টি দল সিঙ্গিনালা ও সাম্মে আদামে অবস্থান করছে।
ইতিপূর্বে রাঙ্গামাটির বন্দুকভাঙা এলাকায় মারিচুক মোনে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্তু গ্রুপের একটি সশস্ত্র দল অবস্থান নেয়। তারা এখনও সেখানে রয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী নিয়মিত ওই এলাকার চারদিকে টহল দিয়ে থাকে। রাঙ্গামাটির ফুরমোনেও সন্তু গ্রুপ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মাঝেমধ্যে অবস্থান করে থাকে। দীঘিনালার নারেইছড়িতে সেনাবাহিনী ও সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সদস্যরা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করে থাকে।
বর্মাছড়িতে যে নতুন সেনাক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে সেটাও সেনা-সন্তুর গোপন সমঝোতার ফল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। লক্ষ্য করা দরকার, সন্তু লারমা আগে চুক্তি মোতাবেক সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি করতেন এবং নতুন ক্যাম্প স্থাপনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেন, যদিও সেটা অনেকটা লোকদেখানো ব্যাপার ছিল। কিন্তু ইদানিং তিনি এ ব্যাপারে একেবারে নীরব রয়েছেন, একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না। তার এই নীরবতা সেনাবাহিনীর সাথে তার গোপন সমঝোতারই ইঙ্গিত।
মোট কথা, সেনাবাহিনী ও জেএসএস সন্তু গ্রুপ গোপনে ইউপিডিএফ-বিরোধী একটি অলিখিত জোট গঠন করেছে। তবে এটাও ঠিক, গত ২৭ বছর ধরে তারা বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফ-কে ধ্বংস করতে যৌথভাবে চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু তাতে তারা সফল হয়নি। এবারে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতা আগের চাইতে গভীর হলেও, ফলাফল একই হতে বাধ্য। কারণ ইউপিডিএফ উন্নত নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত দল, যার মূল নেতারা চুক্তি-পূর্ব ও চুক্তি-উত্তর ৩৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। তারা এবং তাদের পার্টি ইউপিডিএফ জনগণের পরীক্ষিত বন্ধু; ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধসহ জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তারা সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সে কারণে এই পার্টির প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও আস্থা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন আন্দোলনে এবং এমনকি আমাদের মাতৃভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে এটা বার বার প্রমাণিত হয়েছে যে, যে পার্টি উন্নত নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যার কর্মীবাহিনী সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত এবং যার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে, সেই পার্টিকে কখনই দমনপীড়ন চালিয়ে ধ্বংস করা যায় না। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দেখা যায়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সব নেতাকে (কংগ্রেস কোন বিপ্লবী দল ছিল না) জেলে আটকে রাখার পরও বৃটিশরা কংগ্রেস পার্টিকে ধ্বংস করতে পারেনি, আন্দোলনও দমন করতে পারেনি। বরং তাদেরকেই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে পাটতারি গুটিয়ে চলে যেতে হয়েছে।
গত ২৭ বছর ধরে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালিয়েও ইউপিডিএফকে ধ্বংস করা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না। জেএসএস সন্তু গ্রুপ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ইউপিডিএফ বিরোধী গোপন আঁতাত জনগণের মধ্যে আরও বেশি ক্ষোভ সৃষ্টি করবে ও তাদের মধ্যে সংগ্রামী স্পৃহা জাগিয়ে তুলবে। তাদের কাছে জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংস হওয়ার বিপদ আরও বেশি স্পষ্ট হবে এবং এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।
এমনকি এই গোপন আঁতাত জেএসএস সন্তু গ্রুপের অধিকতর সচেতন ও দেশপ্রেমিক অংশকেও প্রভাবিত করবে এবং তারা সন্তু-ভিক্টর-বুলবুল (শ্বশুর-জামাই-নাতি) চক্রের জুম্ম বিরোধী নীতির বিরোধীতা করবে। মনে রাখতে হবে সন্তু লারমার এক সময়কার বিশ্বস্ত কমরেডরা ২০০৬ সালে তার ভুল নীতি মেনে নিতে না পেরে পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন একটি পার্টি গঠন করেছিলেন। যখন তারা দেখবেন সন্তু লারমা কেবলমাত্র আঞ্চলিক পরিষদে থাকার জন্য সেনাবাহিনীর সাথে আঁতাত করে ইউপিডিএফ নির্মূলের নামে জুম্ম জাতির চরম সর্বনাশ করে চলেছেন, তখন তারা জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। (২৬ অক্টোবর ২০২৫)
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
