মহান শিক্ষা দিবসে

ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মিছিল ও সমাবেশ: ধর্ষক-দালালদের কুশপুত্তলিকা দাহ

0

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকায় মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ থেকে বক্তারা পাহাড়ে সহপাঠী শিক্ষার্থী বোনদের সম্ভ্রম, নিরাপত্তা ও মান-সম্মত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ধর্ষণ, যৌণ নিপীড়ন এবং ধর্ষকদের রক্ষাকারী দালালদের শায়েস্তা করার প্রতীকী হিসেবে ধর্ষক ও দালালদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

সমাবেশের আগে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার, টিএসসি, ঢাবি গ্রন্থাগার, অপরাজেয় বাংলা, ডাকসু প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়।

পাহাড়ে সহপাঠী বোনদের সম্ভ্রম, নিরাপত্তা ও মান-সম্মত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে এক হও, লড়াই করো” এই আহ্বানে আয়োজিত সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল প্রমুখ।

সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, সারা দেশে ৪৫টির অধিক ভিন্ন ভাষাভাষি জাতিসত্তার বসবাস থাকলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরে সরকার সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। বাঙালি ভিন্ন অন্য জনগোষ্ঠীর সাথে বর্ণবাদী আচরণ ও বৈষম্য করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং শহরে পাহড়ি শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকুরিতে ন্যায্য কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা  হয়েছে এবং মেডিকেলসহ দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রীতি মেনে পাহাড়ি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে না। এভাবে জাতিসত্তাগুলোকে বঞ্চিত রেখে অন্যান্য সমান রাষ্ট্রীয় সুযোগ না দিয়ে একটা দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থায় আজ ভয়াবহ সংকট চলছে। প্রাথমিকে ও মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার সমতলের চেয়ে অনেক বেশি। পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ৫টি ভাষায় মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ প্রদান করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংকট রয়েছে, দুর্গম এলাকা থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নেই। একই সাথে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়েছে।

তিনি মান-সম্মত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত, সহপাঠী ছাত্রীদের সম্ভ্রম রক্ষার্থে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান।

সমাবেশে নারী নেত্রী নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আজ নারীদের কোথাও নিরাপত্তা নেই। রাঙামাটির লংগদুতে শিক্ষক আব্দুর রহিম নিজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। কিন্তু চাতুর্যের সাথে আইনের ফাঁকফোকরে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় স্কুলে যোগদান করেছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কাপ্তাইয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক পাহাড়ি স্কুল ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধর্ষকরা স্থানীয় দালালদের সাথে যোগসাজশ করছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের রিপোর্ট প্রদানের ওপর গোপন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে কার্যত পার্বত্য চট্টগ্রামকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতা এবং একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার ক্ষোভে ছাত্র সমাজ আজ ধর্ষক-দালালদের কুশপুত্তলিকা দাহ করছে।

সমাবেশে অমল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে নতুন করে একশ্রেণীর লোক সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রাঙামাটির কাউখালী সীমান্ত এলাকার রাউজানে সিবলি সাদিক হৃদয় নামে একজনকে অপহরণের পর হত্যার এক বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে পাহাড়ি বাঙালি দ্বন্দ্ব সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কথিত হৃদয় হত্যাকারী সন্দেহে গ্রেফতারকৃত এক মারমা যুবককে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনীতে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ-সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে আরো দুই মারমা যুবককে গণপিটুনী দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেবলমাত্র সন্দেহবশত গণপিটুনির মাধ্যমে এসব বিচার বহির্ভুত হত্যা অনেক উদ্বেগের জন্ম দেয়। এমন ঘটনা দেশের প্রচলিত আইন-আদালতকেও তোয়াক্কা না করার সামিল।

তিনি রাউজানে ‘হৃদয় হত্যার’ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তর মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি এবং গ্রেফতারকৃত ‘আসামী’ রক্ষায় ব্যর্থ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ধর্ষক ও দালালদের কুশপুত্তলিকার ওপর জুতা স্যান্ডেল দিয়ে লাঠিপেঠা করে ঘৃণা, ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More