ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৩তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ ও র্যালী
ঢাকা : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ২৩তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐতিহাসিক অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি’র আহ্বায়ক বিনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি নিরূপা চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, জাতীয় গণ ফ্রন্ট-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, ছাত্র গণ মঞ্চ সভাপতি সাঈদ বিলাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়া প্রমূখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য অনিল চাকমা।
শনিবার (২১ জানুয়ারি ২০১৭) সকাল ১০.৩০ টায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা ২৩ টি বেলুন উড়িয়ে ২৩তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর সদ্য কারামুক্ত বিনয়ন চাকমা, বিপুল চাকমা ও অনিল চাকমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব বিপুল চাকমার নেতৃত্বে তিন জন কেন্দ্রীয় নেতা এবং ইউপিডিএফের পক্ষে সচিব চাকমা কারামুক্তদের ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান। এ সময় পিসিপি ও ইউপিডিএফ পতাকা পাশে রেখে আন্দোলনের পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না বলে কারামুক্ত তিন জন নেতা প্রতিজ্ঞা করেন।
ছাত্র সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা বলেন, এদেশে পাহাড়িরা মর্যাদার সাথে, নিরিবিলিভাবে বসবাস করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদেরও অবদান ছিল। কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের পরবর্তী সময় সংবিধানে পাহাড়িদের স্বীকৃতি দেয়া হয় নি। তৎকালীন পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি নিয়ে শেখ মুজিবের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লক্ষে আন্দোলন বেগবান করতে ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ চলছে।দেশের সাধারণ কৃষক-মেহনতী মানুষরাও বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের লুটপাট ও শোষণের শিকার হচ্ছেন।
ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, ইতিহাসের নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। পাকিস্তানের শাসকরা বাংলা ভাষা উপর আগ্রাসন চালানের জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছিল কিন্তু তখনকার ছাত্র সমাজরা প্রতিবাদ প্রতিরোধের মাধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে অনেক সামাজিক ও রাজনৈতিক বামদল সৃষ্টি হয়েছে তারা সরকারে গদিতে বসে সরকারে সাথে লেজুর করে জনগণকে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে।তিনি তাদের কাছ থেকে ছাত্র সমাজকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ি জাতিসত্তাদের অস্তিত্বকে ধ্বংস করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী শান্তি সম্প্রতি উন্নয়নের নামে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করছে।
তিনি বলেন, ৭২ সালের সংবিধানের বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এবং ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী প্রশাসন পাহাড়ে ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য পাহাড়িদের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। পাহাড়ে জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে সরকারে ভয় পেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অপারেশন উত্তোরণ ও সেনাশাসন এবং স্বাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১ নির্দেশনা জারি করে রেখেছে।
তিনি বর্তমান আওয়ামিলীগ সরকারে এহেন কার্যক্রমকে ক্ষোভ প্রকাশ ও সমালোচনা করেন।
টিপু বিশ্বাস বলেন, বর্তমান সরকার যে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার তা দেশব্যাপী প্রমাণিত।যেখানে জনগণ সংগ্রাম করছে সেখানে দমনপীড়ন চালাচ্ছে। তিনি পিসিপি’র নেতৃত্বকে নিপীড়িত জনগণের লড়াই সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য আহ্বান জানান।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।